দূরে অশথতলায়

পুঁতির কণ্ঠিখানি গলায়

বাউল দাঁড়িয়ে কেন আছ?

সামনে আঙিনাতে

তোমার একতারাটি হাতে

তুমি সুর লাগিয়ে নাচ!

পথে করতে খেলা

আমার কখন হল বেলা

আমায় শাস্তি দিল তাই।

ইচ্ছে হোথায় নাবি

কিন্তু ঘরে বন্ধ চাবি

আমার বেরোতে পথ নাই।

বাড়ি ফেরার তরে

তোমায় কেউ না তাড়া করে

তোমার নাই কোনো পাঠশালা।

সমস্ত দিন কাটে

তোমার পথে ঘাটে মাঠে

তোমার ঘরেতে নেই তালা।

তাই তো তোমার নাচে

আমার প্রাণ যেন ভাই বাঁচে,

আমার মন যেন পায় ছুটি,

ওগো তোমার নাচে

যেন ঢেউয়ের দোলা আছে,

ঝড়ে গাছের লুটোপুটি।

অনেক দূরের দেশ

আমার চোখে লাগায় রেশ,

যখন তোমায় দেখি পথে।

দেখতে পায় যে মন

যেন নাম-না-জানা বন

কোন্‌ পথহারা পর্বতে।

হঠাৎ মনে লাগে,

যেন অনেক দিনের আগে,

আমি অমনি ছিলেম ছাড়া।

সেদিন গেল ছেড়ে,

আমার পথ নিল কে কেড়ে,

আমার হারাল একতারা।

কে নিল গো টেনে,

আমায় পাঠশালাতে এনে,

আমার এল গুরুমশায়।

মন সদা যার চলে

যত ঘরছাড়াদের দলে

তারে ঘরে কেন বসায়?

কও তো আমায়, ভাই,

তোমার গুরুমশায় নাই?

আমি যখন দেখি ভেবে

বুঝতে পারি খাঁটি,

তোমার বুকের একতারাটি,

তোমায় ঐ তো পড়া দেবে।

তোমার কানে কানে

ওরি গুনগুনানি গানে

তোমায় কোন্‌ কথা যে কয়!

সব কি তুমি বোঝ?

তারি মানে যেন খোঁজ

কেবল ফিরে' ভুবনময়।

ওরি কাছে বুঝি

আছে তোমার নাচের পুঁজি,

তোমার খেপা পায়ের ছুটি?

ওরি সুরের বোলে

তোমার গলার মালা দোলে,

তোমার দোলে মাথার ঝুঁটি।

মন যে আমার পালায়

তোমার একতারা-পাঠশালায়,

আমায় ভুলিয়ে দিতে পার?

নেবে আমায় সাথে?

এ-সব পণ্ডিতেরি হাতে

আমায় কেন সবাই মার?

ভুলিয়ে দিয়ে পড়া

আমায় শেখাও সুরে-গড়া

তোমার তালা-ভাঙার পাঠ।

আর কিছু না চাই,

যেন আকাশখানা পাই,

আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

দূরে কেন আছ?

দ্বারের আগল ধরে নাচ,

বাউল আমারি এইখানে।

সমস্ত দিন ধরে

যেন মাতন ওঠে ভরে

তোমার ভাঙন-লাগা গানে।