একদিন সকালে বৃদ্ধ ধীবর আসিয়া আমিনাকে ভর্ৎসনা করিয়া কহিল, 'তিন্নি।'

ধীবর আরাকান ভাষায় আমিনার নূতন নামকরণ করিয়াছিল-- 'তিন্নি, আজ সকালে তোর হইল কী। কাজকর্মে যে একেবারে হাত লাগাস নাই। আমার নতুন জালে আঠা দেওয়া হয় নাই, আমার নৌকো--'

আমিনা ধীবরের কাছে আসিয়া আদর করিয়া কহিল, 'বুঢ়া, আজ আমার দিদি আসিয়াছেন, তাই আজ ছুটি।'

'তোর আবার দিদি কে রে তিন্নি।'

জুলিখা কোথা হইতে বাহির হইয়া আসিয়া কহিল, 'আমি।'

বৃদ্ধ অবাক হইয়া গেল। তার পর জুলিখার অনেক কাছে আসিয়া ভালো করিয়া তাহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল।

খপ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, 'তুই কাজ-কাম কিছু জানিস?'

আমিনা কহিল, 'বুঢ়া, দিদির হইয়া আমি কাজ করিয়া দিব। দিদি কাজ করিতে পারিবে না।'

বৃদ্ধ কিয়ৎক্ষণ ভাবিয়া জিজ্ঞাসা করিল, 'তুই থাকিবি কোথায়।'

জুলিখা বলিল, 'আমিনার কাছে।'

বৃদ্ধ ভাবিল, এও তো বিষম বিপদ। জিজ্ঞাসা করিল, 'খাইবি কী।'

জুলিখা বলিল 'তাহার উপায় আছে'-- বলিয়া অবজ্ঞাভরে ধীবরের সম্মুখে একটা স্বর্ণমুদ্রা ফেলিয়া দিল।

আমিনা সেটা কুড়াইয়া ধীবরের হাতে তুলিয়া দিয়া চুপিচুপি কহিল, 'বুঢ়া, আর-কোনো কথা কহিস না। তুই কাজে যা, বেলা হইয়াছে।'

জুলিখা ছদ্মবেশে নানা স্থানে ভ্রমণ করিয়া অবশেষে আমিনার সন্ধান পাইয়া কী করিয়া ধীবরের কুটিরে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে সে-সমস্ত কথা বলিতে গেলে দ্বিতীয় আর-একটি কাহিনী হইয়া পড়ে। তাহার রক্ষাকর্তা রহমত শেখ ছদ্মনামে আরাকান রাজসভায় কাজ করিতেছে।
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7