নম, নম, নম।

তুমি ক্ষুধার্তজন-শরণ্য,

অমৃত-অন্ন-ভোগধন্য

করো অন্তর মম।

হেমন্তেরে বিভল করে কিসে,

চলিতে পথে হারাল কেন দিশে।

যেন রে ওর আলোর স্মৃতিখানি

বিস্মৃতির বাষ্পে নিল টানি,--

কণ্ঠ তাই হারাল তার বাণী,

অশ্রু কাঁপে নয়ন-অনিমিষে।

হেমন্তেরে বিভল করে কিসে।

ক্ষণেক তরে লও-না ঘরে ডাকি,

যাত্রা ওর অনেক আছে বাকি।

শিশিরকণা লাগিবে পায়ে পায়ে,

রুক্ষ কেশ কাঁপিবে হিমবায়ে,

আঁধার-করা ঘনবনের ছায়ে

শুষ্ক পাতা রয়েছে পথ ঢাকি।

ক্ষণেক তরে লও-না ঘরে ডাকি।

বাসা যে ওর সুদূর হিমাচলে,

শেওলা-ঝোলা তিমির গুহাতলে।

যে পথ বাহি বলাকা যায় ফিরে

সৈকতিনী নদীর তীরে তীরে,

সে পথ দিয়ে ধানের খেত ঘিরে

হিমের ভারে চলিবে পলে পলে। যেতে যে হবে সুদূর হিমাচলে।

চলিতে পথে এল আঁধার রাতি,

নিবিয়া গেল ছিল যে ওর বাতি।

অসুরদলে গগনে রচে কারা,

তাই তো শশী হয়েছে জ্যোতিহারা,

আকাশ ঘেরি ধরিবে যত তারা

কে যেন জেলে কুহেলি-জাল পাতি।

নিবিয়া গেল ছিল যে ওর বাতি।

বধূরা যবে সাঁজের জ্যোতি জ্বাল

একটি দীপ উহারে দেওয়া ভালো।

দেবতা যারে বিঘ্ন দিয়ে হানে

তোমারা তারে বাঁচায়ো দয়া দানে

কল্যাণী গো, তোদেরি কল্যাণে

ছুটিয়া যাক্‌ কুস্বপন কালো,--

একটি দীপ উহারে দেওয়া ভালো।

শিউলি-ফোটা ফুরাল যেই শীতের বনে,

এলে যে সেই শূন্যখনে।

তাই গোপনে সাজিয়ে ডালা

দুখের সুরে বরণমালা

গাঁথি মনে মনে

শূন্য খনে।

দিনের কোলাহলে

ঢাকা সে যে রইবে হৃদয়তলে।

রাতের তারা উঠবে যবে

সুরের মালা বদল হবে

তখন তোমার সনে

মনে মনে।

হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা--

হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধূমল রঙে আঁকা।

সন্ধ্যাপ্রদীপ তোমার হাতে

মলিন হেরি কুয়াশাতে,

কণ্ঠে তোমার বাণী যেন করুণ বাষ্পে মাখা।

ধরার আঁচল ভরে দিলে প্রচুর সোনার ধানে।

দিগঙ্গনার অঙ্গন আজ পূর্ণ তোমার দানে।

আপন দানের আড়ালেতে

রইলে কেন আসন পেতে,

আপনাকে এই কেমন তোমার গোপন করে রাখা।
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8