ছিলাম যবে মায়ের কোলে,

বাঁশি বাজানো শিখাবে ব'লে

চোরাই করে এনেছ মোরে তুমি,

বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,

যেখানে তব রঙের রঙ্গভূমি।

আকাশতলে এলায়ে কেশ

বাজালে বাঁশি চুপে,

সে মায়াসুরে স্বপ্নছবি

জাগিল কত রূপে;

লক্ষ্যহারা মিলিল তারা

রূপকথার বাটে,

পারায়ে গেল ধূলির সীমা

তেপান্তরী মাঠে।

নারিকেলের ডালের আগে

দুপুরবেলা কাঁপন লাগে,

ইশারা তারি লাগিত মোর প্রাণে,

বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,

কী বলে তারা কে বলো তাহা জানে।

অর্থহারা সুরের দেশে

ফিরালে দিনে দিনে,

ঝলিত মনে অবাক বাণী,

শিশির যেন তৃণে।

প্রভাত-আলো উঠিত কেঁপে

পুলকে কাঁপা বুকে,

বারণহীন নাচিত হিয়া

কারণহীন সুখে।

জীবনধারা অকূলে ছোটে,

দুঃখে সুখে তুফান ওঠে,

আমারে নিয়ে দিয়েছ তাহে খেয়া,

বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,

কালো গগনে ডেকেছে ঘন দেয়া।

প্রাণের সেই ঢেউয়ের তালে

বাজালে তুমি বীণ,

ব্যথায় মোর জাগায়ে নিয়ে

তারের রিনিরিন।

পালের 'পরে দিয়েছ বেগে

সুরের হাওয়া তুলে,

সহসা বেয়ে নিয়েছ তরী

অপূর্বেরি কূলে।

চৈত্রমাসে শুক্ল নিশা

জুঁহিবেলির গন্ধে মিশা;

জলের ধ্বনি তটের কোলে কোলে

বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,

অনিদ্রারে আকুল করি তোলে।

যৌবনে সে উতল রাতে

করুণ কার চোখে

সোহিনী রাগে মিলাতে মিড়

চাঁদের ক্ষীণালোকে।

কাহার ভীরু হাসির 'পরে

মধুর দ্বিধা ভরি

শরমে-ছোঁওয়া নয়নজল

কাঁপাতে থরথরি।

হঠাৎ কভু জাগিয়া উঠি

ছিন্ন করি ফেলেছে টুটি

নিশীথিনীর মৌন যবনিকা,

বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,

হেনেছ তারে বজ্রানলশিখা।

গভীর রবে হাঁকিয়া গেছ,

"অলস থেকো না গো।'

নিবিড় রাতে দিয়েছ নাড়া,

বলেছ, "জাগো জাগো।'

বাসরঘরে নিবালে দীপ,

ঘুচালে ফুলহার,

ধূলি-আঁচল দুলায়ে ধরা

করিল হাহাকার।

বুকের শিরা ছিন্ন করে

ভীষণ পূজা করেছি তোরে,

কখনো পূজা শোভন শতদলে,-

বিচিত্রা হে, বিচিত্রা,

হাসিতে কভু, কখনো আঁখিজলে।

ফসল যত উঠেছে ফলি

বক্ষ বিভেদিয়া

কণাকণায় তোমারি পায়

দিয়েছি নিবেদিয়া।

তবুও কেন এনেছ ডালি

দিনের অবসানে;

নিঃশেষিয়া নিবে কি ভরি

নিঃস্ব-করা দানে।