জীবন-মরণের স্রোতের ধারা

যেখানে এসে গেছে থামি

সেখানে মিলেছিনু সময়হারা

একদা তুমি আর আমি।

চলেছি আজ একা ভেসে

কোথা যে কত দূর দেশে,

তরণী দুলিতেছে ঝড়ে--

এখন কেন মনে পড়ে

যেখানে ধরণীর সীমার শেষে

স্বর্গ আসিয়াছে নামি

সেখানে একদিন মিলেছি এসে

কেবল তুমি আর আমি।

সেখানে বসেছিনু আপন-ভোলা

আমরা দোঁহে পাশে পাশে।

সেদিন বুঝেছিনু কিসের দোলা

দুলিয়া উঠে ঘাসে ঘাসে।

কিসের খুশি উঠে কেঁপে

নিখিল চরাচর ব্যেপে,

কেমনে আলোকের জয়

আঁধারে হল তারাময়,

প্রাণের নিশ্বাস কী মহাবেগে

ছুটেছে দশদিক্‌গামী--

সেদিন বুঝেছিনু যেদিন জেগে

চাহিনু তুমি আর আমি।

বিজনে বসেছিনু আকাশে চাহি

তোমার হাত নিয়ে হাতে।

দোঁহার কারো মুখে কথাটি নাহি,

নিমেষ নাহি আঁখিপাতে।

সেদিন বুঝেছিনু প্রাণে

ভাষার সীমা কোন্‌খানে,

বিশ্বহৃদয়ের মাঝে

বাণীর বীণা কোথা বাজে,

কিসের বেদনা সে বনের বুকে

কুসুমে ফোটে দিনযামী--

বুঝিনু যবে দোঁহে ব্যাকুল সুখে

কাঁদিনু তুমি আর আমি।

বুঝিনু কী আগুনে ফাগুন-হাওয়া

গোপনে আপনার দাহে,

কেন-যে অরুণের করুণ চাওয়া

নিজেরে মিলাইতে চাহে,

অকূলে হারাইতে নদী

কেন যে ধায় নিরবধি,

বিজুলি আপনার বাণে

কেন যে আপনারে হানে,

রজনী কী খেলা যে প্রভাত-সনে

খেলিছে পরাজয়কামী--

বুঝিনু যবে দোঁহে পরান-পণে

খেলিনু তুমি আর আমি।