তখন তারা দৃপ্ত বেগের বিজয়-রথে

ছুটছিল বীর মত্ত অধীর, রক্তধূলির পথবিপথে।

তখন তাদের চতুর্দিকেই রাত্রিবেলার প্রহর যত

স্বপ্নে-চলার পথিক-মতো,

মন্দগমন ছন্দে লুটায় মন্থর কোন্‌ ক্লান্ত বায়ে;

বিহঙ্গগান শান্ত তখন অন্ধ রাতের পক্ষছায়ে।

মশাল তাদের রুদ্রজ্বালায় উঠল জ্বলে--

অন্ধকারের ঊর্ধ্বতলে

বহ্নিদলের রক্তকমল ফুটল প্রবল দম্ভভরে;

দূর-গগনের স্তব্ধ তারা মুগ্ধ ভ্রমর তাহার 'পরে।

ভাবল পথিক-- এই যে তাদের মশাল-শিখা,

নয় সে কেবল দণ্ডপলের মরীচিকা।

ভাবল তারা-- এই শিখাটাই ধ্রুবজ্যোতির তারার সাথে

মৃত্যুহীনের দখিন হাতে

জ্বলবে বিপুল বিশ্বতলে।

ভাবল তারা এই শিখারই ভীষণ বলে

রাত্রি-রানীর দুর্গ-প্রাচীর দগ্ধ হবে,

অন্ধকারের রুদ্ধ কপাট দীর্ণ করে ছিনিয়ে লবে

নিত্যকালের বিত্তরাশি;

ধরিত্রীকে করবে আপন ভোগের দাসী।

ওই বাজে রে ঘণ্টা বাজে।

চমকে উঠেই হঠাৎ দেখে অন্ধ ছিল তন্দ্রামাঝে।

আপ্‌নাকে হায় দেখছিল কোন্‌ স্বপ্নাবেশে

যক্ষপুরীর সিংহাসনে লক্ষমণির রাজার বেশে;

মহেশ্বরের বিশ্ব যেন লুঠ করেছে অট্ট হেসে।

শূন্যে নবীন সূর্য জাগে

ওই যে তাহার বিশ্ব-চেতন কেতন-আগে

জ্বলছে নূতন দীপ্তিরতন তিমির-মথন শুভ্ররাগে;

মশাল-ভস্ম লুপ্তি-ধুলায় নিত্যদিনের সুপ্তি মাগে।

আনন্দলোক দ্বার খুলেছে, আকাশ পুলক-ময়--

জয় ভূলোকের, জয় দ্যুলোকের, জয় আলোকের জয়।