তুমি অচিন মানুষ ছিলে গোপন আপন গহন-তলে,

কেন এলে চেনার সাজে?

তোমায় সাঁজ-সকালে পথে ঘাটে দেখি কতই ছলে

আমার প্রতিদিনের মাঝে।

তোমায় মিলিয়ে কবে নিলেন আপন আনাগোনার হাটে

নানান পান্থদলের সাথে,

তোমায় কখনো বা দেখি আমার তপ্ত ধুলার বাটে

কভু বাদল-ঝরা রাতে।

তোমার ছবি আঁকা পড়ল আমার মনের সীমানাতে

আমার আপন ছন্দে ছাঁদা,

আমার সরু মোটা নানা তুলির নানান রেখাপাতে

তোমার স্বরূপ পড়ল বাঁধা।

তাই আজি আমার ক্লান্ত নয়ন, মনের-চোখে-দেখা

হল চোখের-দেখায় হারা।

দোঁহার পরিচয়ের তরীখানা বালুর চরে ঠেকা,

সে আর পায় না স্রোতের ধারা।

ও যে অচিন মানুষ-- মন উহারে জানতে যদি চাহ

জেনো মায়ার রঙমহলে,

প্রাণে জাগুক্‌ তবে সেই মিলনের উৎসব-উৎসাহ

যাহে বিরহদীপ জ্বলে।

যখন চোখের সামনে বসতে দেবে তখন সে আসনে

রেখো ধ্যানের আসন পেতে,

যখন কইবে কথা সেই ভাষাতে তখন মনে মনে

দিয়ো অশ্রুত সুর গেঁথে।

তোমার জানা ভুবনখানা হতে সুদূরে তার বাসা,

তোমার দিগন্তে তার খেলা।

সেথায় ধরা-ছোঁওয়ার-অতীত মেঘে নানা রঙের ভাষা,

সেথায় আলো-ছায়ার মেলা।

তোমার প্রথম জাগরণের চোখে উষার শুকতারা

যদি তাহার স্মৃতি আনে

তবে যেন সে পায় ভাবের মূর্তি রূপের-বাঁধন-হারা

তোমার সুর-বাহারের গানে।