তরুবিলাসী আমাদের এক তরুণ বন্ধু এই আশ্রমের এক কোণে পথের ধারে একখানি গোলাকার কুটির রচনা করেছেন । সেটি আছে একটি পুরাতন তালগাছের চরণ বেষ্টন ক"রে । তাই তার নাম হয়েছে তালধ্বজ । এটি যেন মৌচাকের মতো,নিভৃতবাসের মধু দিয়ে ভরা । লোভনীয় বলেই মনে করি, সেইসঙ্গে এও মনে হয় বাসস্থান সম্বন্ধে অধিকারভেদ আছে; যেখানে আশ্রয় নেবার ইচ্ছা থাকে সেখানে হয়তো আশ্রয় নেবার যোগ্যতা থাকেনা ।

তোমার কুটিরের

সমুখবাটে

পল্লিরমণীরা

চলেছে হাটে ।

উড়েছে রাঙা ধূলি,

উঠেছে হাসি--

উদাসী বিবাগীর

চলার বাঁশি

আঁধারে আলোকেতে

সকালে সাঁঝে

পথের বাতাসের

বুকেতে বাজে ।

যা-কিছু আসে যায়

মাটির "পরে

পরশ লাগে তারি

তোমার ঘরে ।

ঘাসের কাঁপা লাগে,

পাতার দোলা,

শরতের কাশবনে

তুফান-তোলা,

প্রভাতে মধূপের

গুনগুনানি,

নিশিথে ঝিঁঝিঁরবে

জাল-বুনানি ।

দেখেছি ভোরবেলা

ফিরিছ একা,

পথের ধারে পাও

কিসের দেখা ।

সহজে সুখী তুমি

জানে তা কেবা--

ফুলের গাছে তব

স্নেহের সেবা ।

এ কথা কারো মনে

রবে কি কালি,

মাটির "পরে গেলে

হৃদয় ঢালি ।

দিনের পরে দিন

যে দান আনে

তোমার মন তারে

দেখিতে জানে ।

নম্র তুমি,তাই

সরলচিতে

সবার কাছে কিছু

পেরেছ নিতে,

উচ্চ-পানে সদা

মেলিয়া আঁখি

নিজেরে পলে পলে

দাও নি ফাঁকি ।

চাও নি জিনে নিতে

হৃদয় কারো,

নিজের মন তাই

দিতে যে পার ।

তোমার ঘরে আসে

পথিকজন,

চাহে না জ্ঞান তারা,

চাহে না ধন,

এটুকু বুঝে যায়

কেমনধারা

তোমারি আসনের

শরিক তারা ।

তোমার কুটিরের

পুকুর পাড়ে

ফুলের চারাগুলি

যতনে বাড়ে ।

তোমার কথা নাই,

তারাও বোবা,

কোমল কিশলয়ে

সরল শোভা ।

শ্রদ্ধা দাও,তবু

মূখ না খোলে,

সড়জে বোঝা যায়

নীরব ব"লে ।

তোমারি মতো তব

কুটিরখানি,

স্নিগ্ধ ছায়া তার

বলে না বাণী ।

তাহার শিয়রেতে

তালের গাছে

বিরল পাতাকটি

আলোয় নাচে,

সমুখে খোলা মাঠ

করিছে ধূ ধূ,

দাঁড়ায়ে দুরে দুরে

খেজুর শুধু ।

তোমারি বাসাখানি

আঁটিয়া মুঠি

চাহে না আঁকড়িতে

কালের ঝুঁটি ।

দেখি যে পথিকের

মতোই তাকে,

থাকা ও না -থাকার

সীমায় থাকে ।

ফুলের মতো ও যে,

পাতার মতো,

যখন যাবে,রেখে

যাবে না ক্ষত ।

নাইকো রেষারেষি

পথে ও ঘরে,

তাহারা মেশামেশি

সহজে করে ।

কীর্তিজালে ঘেরা

আমি তো ভাবি,

তোমার ঘরে ছিল

আমারো দাবি;

হারায়ে ফেলেছি সে

ঘূর্ণিবায়ে,

অনেক কাজে আর

অনেক দায়ে ।