আকাশে ঈশানকোণে মসীপুঞ্জ মেঘ।

আসন্ন ঝড়ের বেগ

স্তব্ধ রহে অরণ্যের ডালে ডালে

যেন সে বাদুড় পালে পালে।

নিষ্কম্প পল্লবঘন মৌনরাশি

শিকার-প্রত্যাশী

বাঘের মতন আছে থাবা পেতে,

রন্ধ্রহীন আঁধারেতে।

ঝাঁকে ঝাঁক

উড়িয়া চলেছে কাক

আতঙ্ক বহন করি উদ্‌বিগ্ন ডানার 'পরে।

যেন কোন্‌ ভেঙে-পড়া লোকান্তরে

ছিন্ন ছিন্ন রাত্রিখন্ড চলিয়াছে উড়ে

উচ্ছৃঙ্খল ব্যর্থতার শূন্যতল জুড়ে।

দুর্যোগের ভূমিকায় তুমি আজ কোথা হতে এলে

এলোচুলে অতীতের বনগন্ধ মেলে।

জন্মের আরম্ভপ্রান্তে আর-একদিন

এসেছিলে অম্লান নবীন

বসন্তের প্রথম দূতিকা,

এনেছিলে আষাঢ়ের প্রথম যূথিকা

অনির্বচনীয় তুমি।

মর্মতলে উঠিলে কুসুমি

অসীম বিস্ময়-মাঝে, নাহি জানি এলে কোথা হতে

অদৃশ্য আলোক হতে দৃষ্টির আলোতে।

তেমনি রহস্যপথে, হে অভিসারিকা,

আজ আসিয়াছ তুমি; ক্ষণদীপ্ত বিদ্যুতের শিখা

কী ইঙ্গিত মেলিতেছে মুখে তব,

কী তাহার ভাষা অভিনব।

আসিছ যে-পথ বেয়ে সেদিনের চেনা পথ এ কি।

এ যে দেখি

কোথাও বা ক্ষীণ তার রেখা,

কোথাও চিহ্নের সূত্র লেশমাত্র নাহি যায় দেখা।

ডালিতে এনেছ ফুল স্মৃত বিস্মৃত,

কিছু-বা অপরিচিত।

হে দূতী, এনেছ আজ গন্ধে তব যে-ঋতুর বাণী

নাম তার নাহি জানি।

মৃত্যু-অন্ধকারময়

পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে আসন্ন তাহার পরিচয়।

তারি বরমাল্যখানি পরাইয়া দাও মোর গলে

স্তিমিতনক্ষত্র এই নীরবের সভাঙ্গনতলে।

এই তব শেষ অভিসারে

ধরণীর পারে

মিলন ঘটায়ে যাও অজানার সাথে

অন্তহীন রাতে।