তোমার প্রত্যাশা লয়ে আছি প্রিয়তমে,

চিত্ত মোর তোমারে প্রণমে।

অয়ি অনাগতা, অয়ি নিত্য প্রত্যাশিতা,

হে সৌভাগ্যদায়িনী দয়িতা।

সেবাকক্ষে করি না আহ্বান;

শুনাও তাহারি জয়গান

যে বীর্য বাহিরে ব্যর্থ, যে ঐশ্বর্য ফিরে অবাঞ্ছিত,

চাটুলুব্ধ জনতায় যে তপস্যা নির্মম লাঞ্ছিত।

দীর্ঘ এ দুর্গম পথ মধ্যাহ্নতাপিত,

অনিদ্রায় রজনী যাপিত।

শুষ্কবাক্যবালুকার ঘূর্ণিপাক-ঝড়ে

পথিক ধুলায় শুয়ে পড়ে।

নাহি চাহি মধুর শুশ্রূষা,

হে কল্যাণী, তুমি নিষ্কলুষা,

তোমার প্রবল প্রেম প্রাণভরা সৃষ্টি নিশ্বাস,

উদ্দীপ্ত করুক চিত্তে ঊর্ধ্বশিখা বিপুল বিশ্বাস।

ধূসর প্রদোষে আজি অস্তপথ জুড়ে

নিশাচর মিথ্যা চলে উড়ে।

আলো-আঁধারের পাকে না মিলে কিনারা,

দীর্ঘ যে দেখায় হ্রস্ব যারা।

যাচে দেশ মোহের দীক্ষারে,

কাঁদে দিক বিধির ধিক্কারে,

ভাগ্যের ভিক্ষুক চাহে কুটিল সিদ্ধির আশীর্বাদ,

ধূলিতে-খুঁটিয়া-তোলা বহুজন-উচ্ছিষ্ট প্রসাদ।

কুৎসায় বিস্তারি দেয় পঙ্কে-ক্লিন্ন গ্লানি,

কলহেরে শৌর্য ব'লে জানি,

ভাবি, দুর্যোগের সিন্ধু তরিব হেলায়

বঞ্চনার ভঙ্গুর ভেলায়।

বাহিরে মুক্তিরে ব্যর্থ খুঁজি,

অন্তরে বন্ধন করি পুঁজি,

অশক্তি মজ্জায় রক্তে, শক্তি বলি জানি ছলনাকে,

মর্মগত খর্বতায় সর্বকালে খর্ব করি রাখে।

হে বাণীরূপিণী, বাণী জাগাও অভয়,

কুজ্ঝটিকা চিরসত্য নয়।

চিত্তেরে তুলুক ঊর্ধ্বে মহত্ত্বের পানে

উদাত্ত তোমার আত্মদানে।

হে নারী, হে আত্মার সঙ্গিনী,

অবসাদ হতে লহো জিনি,

স্পর্ধিত কুশ্রীতা নিত্য যতই করুক সিংহনাদ,

হে সতী সুন্দরী, আনো তাহার নিঃশব্দ প্রতিবাদ।