দুঃখী তুমি একা,

যেতে যেতে কটাক্ষেতে পেলে দেখা--

হোথা দুটি নরনারী নববসন্তের কুঞ্জবনে

দক্ষিণ পবনে।

বুঝি মনে হল, যেন চারি ধার

সঙ্গীহীন তোমারেই দিতেছে ধিক্কার।

মনে হল, রোমাঞ্চিত অরণ্যের কিশলয়

এ তোমার নয়।

ঘনপুঞ্জ অশোকমঞ্জরী

বাতাসের অন্দোলনে ঝরি ঝরি

প্রহরে প্রহরে

যে নৃত্যের তরে

বিছাইছে আস্তরণ বনবীথিময়,

সে তোমার নয়।

ফাল্গুনের এই ছন্দ, এই গান,

এই মাধুর্যের দান,

যুগে যুগান্তরে

শুধু মধুরের তরে

কমলার আশীর্বাদ করিছ সঞ্চয়,

সে তোমার নয়।

অপর্যাপ্ত ঐশ্বর্যের মাঝখান দিয়া

অকিঞ্চনহিয়া

চলিয়াছ দিনরাতি,

নাই সাথি,

পাথেয় সম্বল নাই প্রাণে,

শুধু কানে

চারি দিক হতে সবে কয়--

"এ তোমার নয়'।

তবু মনে রেখো, হে পথিক,

দুর্ভাগ্য তোমার চেয়ে অনেক অধিক

আছে ভবে।

দুই জনে পাশাপাশি যবে

রহে একা তার চেয়ে একা কিছু নাই এ ভুবনে।

দুজনার অসংলগ্ন মনে

ছিদ্রময় যৌবনের তরী

অশ্রুর তরঙ্গে ওঠে ভরি--

বসন্তের রসরাশি সেও হয় দারুণ দুর্বহ,

যুগলের নিঃসঙ্গতা নিষ্ঠুর বিরহ।

তুমি একা, রিক্ত তব চিত্তাকাশে কোনো বিঘ্ন নাই;

সেথা পায় ঠাঁই

পান্থ মেঘদল--

লয়ে রবিরশ্মি লয়ে অশ্রুজল

ক্ষণিকের স্বপ্নস্বর্গ করিয়া রচনা

অস্তসমুদ্রের পারে ভেসে তারা যায় অন্যমনা।

চেয়ে দেখো, দোঁহে যারা হোথা আছে

কাছে-কাছে

তবু যাহাদের মাঝে

অন্তহীন বিচ্ছেদ বিরাজে--

কুসুমিত এ বসন্ত, এ আকাশ, এই বন,

খাঁচার মতন

রুদ্ধদ্বার, নাহি কহে কথা--

তারাও ওদের কাছে হারালো অপূর্ব অসীমতা।

দুজনের জীবনের মিলিত অঞ্জলি,

তাহারি শিথিল ফাঁকে দুজনের বিশ্ব পড়ে গলি।