দেবী, অনেক ভক্ত এসেছে তোমার চরণতলে

অনেক অর্ঘ্য আনি,

আমি অভাগ্য এনেছি বহিয়া নয়নজলে

ব্যর্থ সাধনখানি।

তুমি জান মোর মনের বাসনা,

যত সাধ ছিল সাধ্য ছিল না,

তবু বহিয়াছি কঠিন কামনা

দিবসনিশি।

মনে যাহা ছিল হয়ে গেল আর,

গড়িতে ভাঙিয়া গেল বারবার,

ভালোয় মন্দে আলোয় আঁধার

গিয়েছে মিশি।

তবু ওগো, দেবী, নিশিদিন করি পরানপণ,

চরণে দিতেছি আনি

মোর জীবনের সকল শ্রেষ্ঠ সাধের ধন

ব্যর্থ সাধনখানি।

ওগো ব্যর্থ সাধনখানি

দেখিয়া হাসিছে সার্থকফল

সকল ভক্ত প্রাণী।

তুমি যদি, দেবী, পলকে কেবল

কর কটাক্ষ স্নেহসুকোমল,

একটি বিন্দু ফেল আঁখিজল

করুণা মানি,

সব হবে তবে সার্থক হবে

ব্যর্থ সাধনখানি।

দেবী, আজি আসিয়াছে অনেক যন্ত্রী শুনাতে গান

অনেক যন্ত্র আনি,

আমি আনিয়াছি ছিন্নতন্ত্রী নীরব ম্লান

এই দীন বীণাখানি।

তুমি জান ওগো করি নাই হেলা,

পথে প্রান্তরে করি নাই খেলা,

শুধু সাধিয়াছি বসি সারাবেলা

শতেক বার।

মনে যে গানের আছিল আভাস,

যে তান সাধিতে করেছিনু আশ,

সহিল না সেই কঠিন প্রয়াস--

ছিঁড়িল তার।

স্তবহীন তাই রয়েছি দাঁড়ায়ে সারাটি ক্ষণ,

আনিয়াছি গীতহীনা

আমার প্রাণের একটি যন্ত্র বুকের ধন

ছিন্নতন্ত্রী বীণা।

ওগো ছিন্নতন্ত্রী বীণা

দেখিয়া তোমার গুণীজন সবে

হাসিছে করিয়া ঘৃণা।

তুমি যদি এরে লহ কোলে তুলি,

তোমার শ্রবণে উঠিবে আকুলি

সকল অগীত সংগীতগুলি,

হৃদয়াসীনা।

ছিল যা আশায় ফুটাবে ভাষায়

ছিন্নতন্ত্রী বীণা।

দেবী, এ জীবনে আমি গাহিয়াছি বসি অনেক গান,

পেয়েছি অনেক ফল--

সে আমি সবারে বিশ্বজনারে করেছি দান,

ভরেছি ধরণীতল।

যার ভালো লাগে সেই নিয়ে যাক,

যতদিন থাকে ততদিন থাক্‌,

যশ-অপযশ কুড়ায়ে বেড়াক

ধুলার মাঝে।

বলেছি যে কথা করেছি যে কাজ

আমার সে নয় সবার সে আজ

ফিরিছে ভ্রমিয়া সংসারমাঝ

বিবিধ সাজে।

যা-কিছু আমার আছে অপনার শ্রেষ্ঠ ধন

দিতেছি চরণে আসি--

অকৃত কার্য, অকথিত বাণী, অগীত গান,

বিফল বাসনারাশি।

ওগো বিফল বাসনারাশি

হেরিয়া আজিকে ঘরে পরে সবে

হাসিছে হেলার হাসি।

তুমি যদি, দেবী, লহ কর পাতি,

আপনার হাতে রাখ মালা গাঁথি,

নিত্য নবীন রবে দিনরাতি

সুবাসে ভাসি,

সফল করিবে জীবন আমার

বিফল বাসনারাশি।