অঘ্রান হ'ল সারা,

স্বচ্ছ নদীর ধারা

বহি চলে কলসংগীতে।

কম্পিত ডালে ডালে

মর্মর-তালে-তালে

শিরীষের পাতা ঝরে শীতে।

ও পারে চরের মাঠে

কৃষাণেরা ধান কাটে,

কাস্তে চালায় নতশিরে।

নদীতে উজান-মুখে

মাস্তুল পড়ে ঝুঁকে,

গুণ-টানা তরী চলে ধীরে।

পল্লীর পথে মেয়ে

ঘাট থেকে আসে নেয়ে,

ভিজে চুল লুণ্ঠিত পিঠে।

উত্তর-বায়ু-ভরে

বক্ষে কাঁপন ধরে,

রোদ্‌দুর লাগে তাই মিঠে।

শুক্‌নো খালের তলে

এক-হাঁটু ডোবা-জলে

বাগ্‌দিনি শেওলায় পাঁকে

করে জল ঘাঁটাঘাঁটি

কক্ষে আঁচল আঁটি--

মাছ ধ'রে চুব্‌ড়িতে রাখে।

ডাঙায় ঘাটের কাছে

ভাঙা নৌকোটা আছে--

তারি 'পরে মোক্ষদা বুড়ি

মাথা ঢুলে পড়ে বুকে

রৌদ্র পোহায় সুখে

জীর্ণ কাঁথাটা দিয়ে মুড়ি।

আজি বাবুদের বাড়ি

শ্রাদ্ধের ঘটা ভারি,

ডেকেছেন আশু জদ্দার।

হাতে কঞ্চির ছড়ি

টাট্টু ঘোড়ায় চড়ি

চলে তাই কালু সর্দার।

বউ যায় চৌগাঁয়ে,

ঝি-বুড়ি চলেছে বাঁয়ে,

পাল্‌কি কাপড়ে আছে ঘেরা।

বেলা ওই যায় বেড়ে

হাঁই-হুঁই ডাক ছেড়ে,

হন্‌-হন্‌ ছোটে বাহকেরা।

শ্রান্ত হয়েছে দিন,

আলো হয়ে এল ক্ষীণ,

কালো ছায়া পড়ে দিঘি-জলে।

শীত-হাওয়া জেগে ওঠে,

ধেনু ফিরে যায় গোঠে,

বকগুলো কোথা উড়ে চলে।

আখের খেতের আড়ে

পদ্মপুকুর-পাড়ে

সূর্য নামিয়া গেল ক্রমে।

হিমে-ঘোলা বাতাসেতে

কালো আবরণ পেতে

খড়-জ্বালা ধোঁওয়া ওঠে জ'মে।