পূর্ণতার সাধনায় বনস্পতি চাহে ঊর্ধ্বপানে;

পুঞ্জ পুঞ্জ পল্লবে পল্লবে

নিত্য তার সাড়া জাগে বিরাটের নিঃশব্দ আহ্বানে,

মন্ত্র জপে মর্মরিত রবে।

ধ্রুবত্বের মূর্তি সে যে, দৃঢ়তা শাখায় প্রশাখায়

বিপুল প্রাণের বহে ভার।

তবু তার শ্যামলতা কম্পমান ভীরু বেদনায়

আন্দোলিয়া উঠে বারম্বার।

দয়া কোরো, দয়া কোরো আরণ্যক এই তপস্বীরে--

ধৈর্য ধরো ওগো দিগঙ্গনা,

ব্যর্থ করিবারে তায় অশান্ত আবেগে ফিরে ফিরে

বনের অঙ্গনে মাতিয়ো না।

এ কী তীব্র প্রেম, এ যে শিলাবৃষ্টি নির্মম দুঃসহ--

দুরন্ত চূম্বনবেগে তব

ছিঁড়িতে ঝরাতে চাও অন্ধ সুখে কহো মোরে কহো

কিশোর কোরক নব নব?

অকস্মাৎ দস্যুতায় তারে রিক্ত করি নিতে চাও

সর্বস্ব তাহার তব সাথে?

ছিন্ন করি লবে যাহা চিহ্ন তার রবে না কোথাও,

হবে তারে মুহূর্তে হারাতে।

যে লুব্ধ ধূলির তলে লুকাতে চাহিবে তব লাভ

সে তোমারে ফাঁকি দেবে শেষে।

লুণ্ঠনের ধন লুঠি সর্বগ্রাসী দারুণ অভাব

উঠিবে কঠিন হাসি হেসে।

আসুক তোমার প্রেম দীপ্তিরূপে নীলাম্বরতলে,

শান্তিরূপে এসো দিগঙ্গনা!

উঠুক স্পন্দিত হয়ে শাখে শাখে পল্লবে বল্কলে

সুগম্ভীর তোমার বন্দনা।

দাও তারে সেই তেজ মহত্বে যাহার সমাধান,

সার্থক হোক সে বনস্পতি।

বিশ্বের অঞ্জলি যেন ভরিয়া করিতে পারে দান

তপস্যার পূর্ণ পরিণতি।

উঠুক তোমার প্রেম রূপ ধরি তার সর্বমাঝে

নিত্য নব পত্রে ফলে ফুলে।

গোপন আঁধারে তার যে অনন্ত নিয়ত বিরাজে

আবরণ দাও তার খুলে।

তাহার গৌরবে লহো তোমারি স্পর্শের পরিচয়,

আপনার চরম বারতা--

তারি লাভে লাভ করো বিনা লোভে সম্পদ অক্ষয়,

তারি ফলে তব সফলতা।