পিয়র্সন কয়েক জোড়া সবুজরঙের বিদেশী পাখি আশ্রমে ছেড়ে দিয়েছিলেন । অনেক দিন তারা এখানে বাসা বেঁধে ছিল । আজকাল আর দেখতে পাই নে । আশা করি কোনো নালিশ নিয়ে তারা চলে যায় নি, কিম্বা এখানকার অন্য আশ্রমিক পশু-পাখির সঙ্গে বর্ণভেদ বা সুরের পার্থক্য নিয়ে তাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটে নি ।

এনেছে কবে বিদেশী সখা

বিদেশী পাখি আমার বনে,

সকাল-সাঁঝে কুঞ্জমাঝে

উঠিছে ডাকি সহজ মনে ।

অজানা এই সাগরপারে

হল না তার গানের ক্ষতি ।

সবুজ তার ডানার আভা,

চপল তার নাচের গতি ।

আমার দেশে যে-মেঘ এসে

নীপবনের মরমে মেশে

বিদেশী পাখি গীতালি দিয়ে

মিতালি করে তাহার সনে ।

বটের ফলে আরতি তার ,

রয়েছে লোভ নিমের তরে,

বনজামেরে চঞ্চু তার

অচেনা ব"লে দোষী না করে ।

শরতে যবে শিশির বায়ে

উচ্ছ্বসিত শিউলিবীথি,

বাণীরে তার করে না ম্লান

কুহেলিঘন পুরানো স্মৃতি ।

শালের ফুল-ফোটার বেলা

মধুকাঙালী লোভীর মেলা,

চিরমধুর বঁধুর মতো

সে ফুল তার হৃদয় হরে ।

বেণুবনের আগের ডালে

চটুল ফিঙা যখন নাচে

পরদেশী এ পাখির সাথে

পরানে তার ভেদ কি আছে ।

উষার ছোঁওয়া জাগায় ওরে

ছাতিমশাখে পাতার কোলে,

চোখের আগে যে ছবি জাগে

মানে না তারে প্রবাস ব"লে ।

আলোতে সোনা,আকাশে নীলা,

সেথা যে চিরজানারই লীলা,

মায়ের ভাষা শোনে সেখানে

শ্যামল ভাষা যেখানে গাছে ।