ফাল্গুনের রঙিন আবেশ

যেমন দিনে দিনে মিলিয়ে দেয় বনভূমি

নীরস বৈশাখের রিক্ততায়,

তেমনি করেই সরিয়ে ফেলেছ হে প্রমদা, তোমার মদির মায়া

অনাদরে অবহেলায় ।

একদিন আপন হাতে আমার চোখে বিছিয়েছিলে বিহ্বলতা,

রক্তে দিয়েছিলে দোল,

চিত্তে ভরেছিলে নেশায়,হে আমার সাকী,

পাত্র উজাড় ক'রে

জাদুরসধারা আজ ঢেলে দিয়েছ ধুলায় ।

আজ উপেক্ষা করেছ আমার স্তুতিকে,

আমার দুই চক্ষুর বিস্ময়কে ডাক দিতে ভুলে গেলে;

আজ তোমার সাজের মধ্যে কোনো আকুতি নেই;

নেই সেই নীরব সুরের ঝংকার

যা আমার নামকে দিয়েছিল রাগিণী ।

শুনেছি একদিন চাঁদের দেহ ঘিরে

ছিল হাওয়ার আবর্ত ।

তখন ছিল তার রঙের শিল্প,

ছিল সুরের মন্ত্র,

ছিল সে নিত্য নবীন ।

দিনে দিনে উদাসী কেন ঘুচিয়ে দিল

আপন লীলার প্রবাহ ।

কেন ক্লান্ত হল সে আপনার মাধুর্যকে নিয়ে ।

আজ শুধু তার মধ্যে আছে

আলোছায়ার মৈত্রীবিহীন দ্বন্দ্ব --

ফোটে না ফুল,

বহে না কলমুখরা নির্ঝরিণী ।

সেই বাণীহারা চাঁদ তুমি আজ আমার কাছে ।

দুঃখ এই যে,এতে দুঃখ নেই তোমার মনে ।

একদিন নিজেকে নূতন নূতন ক'রে সৃষ্টি করেছিলে মায়াবিনী,

আমারই ভালোলাগার রঙে রঙিয়ে ।

আজ তারই উপর তুমি টেনে দিলে

যুগান্তের কালো যবনিকা

বর্ণহীন,ভাষাহীন ।

ভুলে গেছ যতই দিতে এসেছিলে আপনাকে

ততই পেয়েছিলে আপনাকে বিচিত্র করে ।

আজ আমাকে বঞ্চিত করে

বঞ্চিত হয়েছ আপন সার্থকতায় ।

তোমার মাধুর্যযুগের ভগ্নশেষ

রইল আমার মনের স্তরে স্তরে --

সেদিনকার তোরণের স্তুপ,

প্রাসাদের ভিত্তি,

গুল্মে-ঢাকা বাগানের পথ ।

আমি বাস করি

তোমার ভাঙা ঐশ্বর্যের ছড়ানো টুকরোর মধ্যে ।

আমি খুঁজে বেড়াই মাটির তলার অন্ধকার,

কুড়িয়ে রাখি যা ঠেকে হাতে ।

আর তুমি আছ

আপন কৃপণতার পাণ্ডুর মরুদেশে,

পিপাসিতের জন্যে জল নেই সেখানে,

পিপাসাকে ছলনা করতে পারে

নেই এমন মরীচিকারও সম্বল ।