ভুলে গেছি কবে তুমি ছেলেবেলা একদিন

মরমের কাছে এসেছিলে,

স্নেহময় ছায়াময় সন্ধ্যাসম আঁখি মেলি

একবার বুঝি হেসেছিলে।

বুঝি গো সন্ধ্যার কাছে শিখেছে সন্ধ্যার মায়া

ওই আঁখি দুটি--

চাহিলে হৃদয়পানে মরমেতে পড়ে ছায়া,

তারা উঠে ফুটি।

আগে কে জানিত বলো কত কী লুকানো ছিল

হৃদয়নিভৃতে,

তোমার নয়ন দিয়া আমার নিজের হিয়া

পাইনু দেখিতে।

কখনো গাও নি তুমি কেবল নীরবে রহি

শিখায়েছ গান--

স্বপ্নময় শান্তিময় পূরবীরাগিনী-তানে

বাঁধিয়াছ প্রাণ।

আকাশের পানে চাই, সেই সুরে গান গাই

একেলা বসিয়া।

একে একে সুরগুলি, অনন্তে হারায়ে যায়

আঁধারে পশিয়া।

বলো দেখি কতদিন আস নি এ শূন্য প্রাণে।

বলো দেখি কতদিন চাও নি হৃদয়পানে,

বলো দেখি কতদিন শোনো নি এ মোর গান--

তবে সখী গান-গাওয়া হল বুঝি অবসান।

যে রাগ শিখায়েছিলে সে কি আমি গেছি ভুলে?

তার সাথে মিলিছে না সুর?

তাই কি আস না প্রাণে, তাই কি শোন না গান--

তাই সখী, রয়েছ কি দূর?

ভালো সখী, আবার শিখাও,

আরবার মুখপানে চাও,

একবার ফেলো অশ্রুজল,

আঁখিপানে দুটি আঁখি তুলি।

তা হলে পুরানো সুর আবার পড়িবে মনে,

আর কভু যাইব না ভুলি।

সেই পুরাতন চোখে মাঝে মাঝে চেয়ো সখী,

উজলিয়া স্মৃতির মন্দির।

এই পুরাতন প্রাণে মাঝে মাঝে এসো সখী,

শূন্য আছে প্রাণের কুটির।

নহিলে আঁধার মেঘরাশি

হৃদয়ের আলোক নিবাবে,

একে একে ভুলে যাব সুর,

গান গাওয়া সাঙ্গ হয়ে যাবে।