আজিকার দিন না ফুরাতে

হবে মোর এ আশা পুরাতে--

শুধু এবারের মতো

বসন্তের ফুল যত

যাব মোরা দুজনে কুড়াতে।

তোমার কাননতলে ফাল্গুন আসিবে বারম্বার,

তাহারি একটি শুধু মাগি আমি দুয়ারে তোমার।

বেলা কবে গিয়াছে বৃথাই

এতকাল ভুলে ছিনু তাই।

হঠাৎ তোমার চোখে

দেখিয়াছি সন্ধ্যালোকে

আমার সময় আর নাই।

তাই আমি একে একে গনিতেছি কৃপণের সম

ব্যাকুল সংকোচভরে বসন্তশেষের দিন মম।

ভয় রাখিয়ো না তুমি মনে!

তোমার বিকচ ফুলবনে

দেরি করিব না মিছে,

ফিরে চাহিব না পিছে

দিনশেষে বিদায়ের ক্ষণে।

চাব না তোমার চোখে আঁখিজল পাব আশা করি

রাখিবারে চিরদিন স্মৃতিরে করুণারসে ভরি।

ফিরিয়া যেয়ো না, শোনো শোনো,

সূর্য অস্ত যায় নি এখনো।

সময় রয়েছে বাকি;

সময়েরে দিতে ফাঁকি

ভাবনা রেখো না মনে কোনো।

পাতার আড়াল হতে বিকালের আলোটুকু এসে

আরো কিছুখন ধরে ঝলুক তোমার কালো কেশে।

হাসিয়া মধুর উচ্চহাসে

অকারণ নির্মম উল্লাসে,

বনসরসীর তীরে

ভীরু কাঠবিড়ালিরে

সহসা চকিত কোরো ত্রাসে।

ভুলে-যাওয়া কথাগুলি কানে কানে করায়ে স্মরণ

দিব না মন্থর করি ওই তব চঞ্চল চরণ।

তার পরে যেয়ো তুমি চলে

ঝরা পাতা দ্রুতপদে দোলে,

নীড়ে-ফেরা পাখি যবে

অস্ফুট কাকলিরবে

দিনান্তেরে ক্ষুব্ধ করি তোলে।

বেণুবনচ্ছায়াঘন সন্ধ্যায় তোমার ছবি দূরে

মিলাইবে গোধূলির বাঁশরির সর্বশেষ সুরে।

রাত্রি যবে হবে অন্ধকার

বাতায়নে বসিয়ো তোমার।

সব ছেড়ে যাব, প্রিয়ে,

সমুখের পথ দিয়ে,

ফিরে দেখা হবে না তো আর।

ফেলে দিয়ো ভোরে-গাঁথা ম্লান মল্লিকার মালাখানি।

সেই হবে স্পর্শ তব, সেই হবে বিদায়ের বাণী।