যক্ষের বিরহ চলে অবিশ্রাম অলকার পথে

পবনের ধৈর্যহীন রথে

বর্ষাবাষ্প-ব্যাকুলিত দিগন্তে ইঙ্গিত-আমন্ত্রণে

গিরি হতে গিরিশীর্ষে, বন হতে বনে।

সমুৎসুক বলাকার ডানার আনন্দ-চঞ্চলতা

তারি সাথে উড়ে চলে বিরহীর আগ্রহ-বারতা

চিরদূর স্বর্গপুরে,

ছায়াচ্ছন্ন বাদলের বক্ষোদীর্ণ নিশ্বাসের সুরে।

নিবিড় ব্যথার সাথে পদে পদে পরমসুন্দর

পথে পথে মেলে নিরন্তর।

পথিক কালের মর্মে জেগে থাকে বিপুল বিচ্ছেদে;

পূর্ণতার সাথে ভেদ

মিটাতে সে নিত্য চলে ভবিষ্যের তোরণে তোরণে

নব নব জীবনে মরণে।

এ বিশ্ব তো তারি কাব্য, মন্দাক্রান্তে তারি রচে টীকা

বিরাট দুঃখের পটে আনন্দের সুদূর ভূমিকা।

ধন্য যক্ষ সেই

সৃষ্টির আগুন-জ্বালা এই বিরহেই।

হোথা বিরহিণী ও যে স্তব্ধ প্রতীক্ষায়,

দন্ড পল গনি গনি মন্থর দিবস তার যায়।

সম্মুখে চলার পথ নাই,

রুদ্ধ কক্ষে তাই

আগন্তুক পান্থ-লাগি ক্লান্তিভারে ধূলিশায়ী আশা।

কবি তারে দেয় নাই বিরহের তীর্থগামী ভাষা।

তার তরে বাণীহীন যক্ষপুরী ঐশ্বর্যের কারা

অর্থহারা--

নিত্য পুষ্প, নিত্য চন্দ্রালোক,

অস্তিত্বের এত বড়ো শোক

নাই মর্তভূমে

জাগরণ নাহি যার স্বপ্নমুগ্ধ ঘুমে।

প্রভুবরে যক্ষের বিরহ

আঘাত করিছে ওর দ্বারে অহরহ।

স্তব্ধগতি চরমের স্বর্গ হতে

ছায়ায়-বিচিত্র এই নানাবর্ণ মর্তের আলোতে

উহারে আনিতে চাহে

তরঙ্গিত প্রাণের প্রবাহে।