যখন রব না আমি মর্তকায়ায়

তখন স্মরিতে যদি হয় মন

তবে তুমি এসো হেথা নিভৃত ছায়ায়

যেখা এই চৈত্রের শালবন।

হেথায় যে মঞ্জরী দোলে শাখে শাখে,

পুচ্ছ নাচায়ে যত পাখি গায়,

ওরা মোর নাম ধরে কভু নাহি ডাকে,

মনে নাহি করে বসি নিরালায়।

কত যাওয়া কত আসা এই ছায়াতলে

আনমনে নেয় ওরা সহজেই,

মিলায় নিমেষে কত প্রতি পলে পলে

হিসাব কোথাও তার কিছু নেই।

ওদের এনেছে ডেকে আদিসমীরণে

ইতিহাসলিপিহারা যেই কাল

আমারে সে ডেকেছিল কভু খনে খনে,

রক্তে বাজায়েছিল তারি তাল।

সেদিন ভুলিয়াছিনু কীর্তি ও খ্যাতি,

বিনা পথে চলেছিল ভোলা মন;

চারি দিকে নামহারা ক্ষণিকের জ্ঞাতি

আপনারে করেছিল নিবেদন।

সেদিন ভাবনা ছিল মেঘের মতন,

কিছু নাহি ছিল ধরে রাখিবার;

সেদিন আকাশে ছিল রূপের স্বপন,

রঙ ছিল উড়ো ছবি আঁকিবার।

সেদিনের কোনো দানে ছোটো বড়ো কাজে

স্বাক্ষর দিয়ে দাবি করি নাই;

যা লিখেছি যা মুছেছি শূন্যের মাঝে

মিলায়েছে, দাম তার ধরি নাই।

সেদিনের হারা আমি-- চিহ্নবিহীন

পথ বেয়ে কোরো তার সন্ধান,

হারাতে হারাতে যেথা চলে যায় দিন,

ভরিতে ভরিতে ডালি অবসান।

মাঝে মাঝে পেয়েছিল আহ্বান-পাঁতি

যেখানে কালের সীমারেখা নেই--

খেলা করে চলে যায় খেলিবার সাথি

গিয়েছিল দায়হীন সেখানেই।

দিন নাই, চাই নাই, রাখি নি কিছুই

ভালো মন্দের কোনো জঞ্জাল;

চলে-যাওয়া ফাগুনের ঝরা ফুলে ভুঁই

আসন পেতেছে মোর ক্ষণকাল।

সেইখানে মাঝে মাঝে এল যারা পাশে

কথা তারা ফেলে গেছে কোন্‌ ঠাঁই;

সংসার তাহাদের ভোলে অনায়াসে,

সভাঘরে তাহাদের স্থান নাই।

বাসা যার ছিল ঢাকা জনতার পারে,

ভাষাহারাদের সাথে মিল যার,

যে আমি চায় নি কারে ঋণী করিবারে,

রাখিয়া যে যায় নাই ঋণভার,

সে আমারে কে চিনেছ মর্তকায়ায়,

কখনো স্মরিতে যদি হয় মন,

ডেকো না ডেকো না সভা-- এসো এ ছায়ায়

যেথা এই চৈত্রের শালবন।