যবে এসে নাড়া দিলে দ্বার

চমকি উঠিনু লাজে,

খুঁজে দেখি গৃহমাঝে

বীণা ফেলে এসেছি আমার,

ওগো বীনকার।

সেদিন মেঘের ভারে

নদীর পশ্চিম পারে

ঘন হল দিগন্তের ভুরু,

বৃষ্টির নাচনে মাতা

বনে মর্মরিল পাতা,

দেয়া গরজিল গুরু গুরু।

ভরা হল আয়োজন,

ভাবিনু ভরিবে মন

বক্ষে জেগে উঠিবে মল্লার--

হায়, লাগিল না সুর

কোথায় সে বহুদূর

বীণা ফেলে এসেছি আমার।

কন্ঠে নিয়ে এলে পুষ্পহার।

পুরস্কার পাব আশে

খুঁজে দেখি চারি পাশে

বীণা ফেলে এসেছি আমার

ওগো বীনকার।

প্রবাসে বনের ছায়ে

সহসা আমার গায়ে

ফাল্গুনের ছোঁয়া লাগে একি?

এ পারের যত পাখি

সবাই কহিল ডাকি,

"ও পারের গান গাও দেখি।'

ভাবিলাম মোর ছন্দে

মিলাব ফুলের গন্ধে

আনন্দের বসন্তবাহার।

খুঁজিয়া দেখিনু বুকে,

কহিলাম নতমুখে,

"বীণা ফেলে এসেছি আমার।'

এল বুঝি মিলনের বার।

আকাশ ভরিল ওই,

শুধাইলে "সুর কই?'--

বীণা ফেলে এসেছি আমার

ওগো বীনকার।

অস্তরবি গোধূলিতে

বলে গেল পূরবীতে

আর তো অধিক নাই দেরি।

রাঙা আলোকের জবা

সাজিয়ে তুলেছে সভা,

সিংহদ্বারে বাজিয়াছে ভেরি।

সুদূর আকাশতলে

ধ্রুবতারা ডেকে বলে,

"তারে তারে লাগাও ঝংকার।'

কানাড়াতে সাহানাতে

জাগিতে হবে যে রাতে--

বীণা ফেলে এসেছি আমার।

এলে নিয়ে শিখা বেদনার।

গানে যে বরিব তারে,

চাহিলাম চারি ধারে--

বীণা ফেলে এসেছি আমার

ওগো বীনকার।

কাজ হয়ে গেছে সারা,

নিশীথে উঠেছে তারা,

মিলে গেছে বাটে আর মাঠে।

দীপহীন বাঁধা তরী

সারা দীর্ঘ রাত ধরি

দুলিয়া দুলিয়া ওঠে ঘাটে।

যে শিখা গিয়েছে নিবে

অগ্নি দিয়ে জ্বেলে দিবে,

সে আলোতে হতে হবে পার।

শুনেছি গানের তালে

সুবাতাস লাগে পালে--

বীণা ফেলে এসেছি আমার।