যায় আসে সাঁওতাল মেয়ে

শিমূলগাছের তলে কাঁকরবিছানো পথ বেয়ে।

মোটা শাড়ি আঁট করে ঘিরে আছে তনু কালো দেহ।

বিধাতার ভোলা-মন কারিগর কেহ

কোন্‌ কালো পাখিটিরে গড়িতে গড়িতে

শ্রাবণের মেঘে ও তড়িতে

উপাদান খুঁজি

ওই নারী রচিয়াছে বুঝি।

ওর দুটি পাখা

ভিতরে অদৃশ্য আছে ঢাকা,

লঘু পায়ে মিলে গেছে চলা আর ওড়া।

নিটোল দু হাতে তার সাদারাঙা কয় জোড়া

গালা-ঢালা চুড়ি,

মাথায় মাটিতে-ভরা ঝুড়ি,

যাওয়া-আসা করে বারবার।

আঁচলে প্রান্ত তার

লাল রেখা দুলাইয়া

পলাশের স্পর্শমায়া আকাশেতে দেয় বুলাইয়া।

পউষের পালা হল শেষ,

উত্তর বাতাসে লাগে দক্ষিণের ক্বচিৎ আবেশ।

হিমঝুরি শাখা-'পরে

চিকন চঞ্চল পাতা ঝলমল করে

শীতের রোদ্‌দুরে।

পাণ্ডুনীল আকাশেতে চিল উড়ে যায় বহুদূরে।

আমলকীলতা ছেয়ে খসে পড়ে ফল,

জোটে সেথা ছেলেদের দল।

আঁকাবাঁকা বনপথে আলোছায়া-গাঁথা,

অকস্মাৎ ঘুরে ঘুরে ওড়ে ঝরা পাতা

সচকিত হাওয়ার খেয়ালে।

ঝোপের আড়ালে

গলাফোলা গিরগিটি স্তব্ধ আছে ঘাসে।

ঝুড়ি নিয়ে বারবার সাঁওতাল মেয়ে যায় আসে।

আমার মাটির ঘরখানা

আরম্ভ হয়েছে গড়া, মজুর জুটেছে তার নানা।

ধীরে ধীরে ভিত তোলে গেঁথে

রৌদ্রে পিঠ পেতে।

মাঝে মাঝে

সুদূরে রেলের বাঁশি বাজে;

প্রহর চলিয়া যায়, বেলা পড়ে আসে,

ঢং ঢং ঘন্টাধ্বনি জেগে ওঠে দিগন্ত-আকাশে।

আমি দেখি চেয়ে,

ঈষৎ সংকোচে ভাবি--এ কিশোরী মেয়ে

পল্লীকোণে যে ঘরের তরে

করিয়াছে প্রস্ফুটিত দেহে ও অন্তরে

নারীর সহজ শক্তি আত্মনিবেদনপরা

শুশ্রূষার স্নিগ্ধসুধা-ভরা,

আমি তারে লাগিয়েছি কেনা কাজে করিতে মজুরি--

মূল্যে যার অসম্মান সেই শক্তি করি চুরি

পয়সার দিয়ে সিঁধকাঠি।

সাঁওতাল মেয়ে ওই ঝুড়ি ভরে নিয়ে আসে মাটি।