যে-কথা বলিতে চাই,

বলা হয় নাই,

সে কেবল এই--

চিরদিবসের বিশ্ব আঁখিসম্মুখেই

দেখিনু সহস্রবার

দুয়ারে আমার।

অপরিচিতের এই চির পরিচয়

এতই সহজে নিত্য ভরিয়াছে গভীর হৃদয়

সে-কথা বলিতে পারি এমন সরল বাণী

আমি নাহি জানি।

শূন্য প্রান্তরের গান বাজে ওই একা ছায়াবটে;

নদীর এপারে ঢালু তটে

চাষি করিতেছে চাষ;

উড়ে চলিয়াছে হাঁস

ওপারের জনশূন্য তৃণশূন্য বালুতীরতলে।

চলে কি না চলে

ক্লান্তস্রোত শীর্ণ নদী, নিমেষ-নিহত

আধো-জাগা নয়নের মতো।

পথখানি বাঁকা

বহুশত বরষের পদচিহ্ন-আঁকা

চলেছে মাঠের ধারে, ফসল-খেতের যেন মিতা,

নদীসাথে কুটিরের বহে কুটুম্বিতা।

ফাল্গুনের এ-আলোয় এই গ্রাম, ওই শূন্য মাঠ,

ওই খেয়াঘাট,

ওই নীল নদীরেখা, ওই দূর বালুকার কোলে

নিভৃত জলের ধারে চখাচখি কাকলি-কল্লোলে

যেখানে বসায় মেলা-- এই সব ছবি

কতদিন দেখিয়াছে কবি।

শুধু এই চেয়ে দেখা, এই পথ বেয়ে চলে যাওয়া,

এই আলো, এই হাওয়া,

এইমতো অস্ফুটধ্বনির গুঞ্জরণ,

ভেসে-যাওয়া মেঘ হতে

অকস্মাৎ নদীস্রোতে

ছায়ার নিঃশব্দ সঞ্চরণ,

যে আনন্দ-বেদনায় এ জীবন বারেবারে করেছে উদাস

হৃদয় খুঁজিছে আজি তাহারি প্রকাশ।