লতার লাবণ্য যেন কচি কিশলয়ে ঘেরা,

সুকুমার প্রাণ তার মাধুরীতে ঢেকেছে-

কোমল মুকুলগুলি চারি দিকে আকুলিত

তারি মাঝে প্রাণ যেন লুকিয়ে রেখেছে।

ওরে যেন ভালো করে দেখা যায় না,

আঁখি যেন ডুবে গিয়ে কূল পায় না।

সাঁঝের আভা নেমে এল, জ্যোৎস্না পাশে ঘুমিয়ে প'ল,

ফুলের গন্ধ দেখতে এসেছে,

তারাগুলি ঘিরে বসেছে।

পুরবীরাগিণীগুলি দূর হতে চলে আসে

ছুঁতে তারে হয় নাকো ভরসা-

কাছে কাছে ফিরে ফিরে মুখপানে চায় তারা,

যেন তারা মধুময়ী দুরাশা।

ঘুমন্ত প্রাণেরে ঘিরে স্বপ্নগুলি ঘুরে ফিরে

গাঁথে যেন আলোকের কুয়াশা,

ঢেকে তারে আছে কত, চারি দিকে শত শত

অনিমিষ নয়নের পিয়াসা।

ওদের আড়াল থেকে আবছায়া দেখা যায়

অতুলন প্রাণের বিকাশ,

সোনার মেঘের মাঝে কচি উষা ফোটে ফোটে

পুরবেতে তাহারি আভাস।

আলোকবসনা যেন আপনি সে ঢাকা আছে

আপনার রূপের মাঝার,

রেখা রেখা হাসিগুলি আশেপাশে চমকিয়ে

রূপেতেই লুকায় আবার।

আঁখির আলোক-ছায়া আঁখিরে রয়েছে ঘিরে,

তারি মাঝে দৃষ্টি পথহারা,

যেথা চলে স্বর্গ হতে অবিরাম পড়ে যেন

লাবণ্যের পুষ্পবারিধারা।

ধরণীরে ছুঁয়ে যেন পা দুখানি ভেসে যায়,

কুসুমের স্রোত বহে যায়,

কুসুমেরে ফেলে রেখে খেলাধুলা ভুলে গিয়ে

মায়ামুগ্ধ বসন্তের বায়।

ওরে কিছু শুধাইলে বুঝি রে নয়ন মেলি

দুদণ্ড নীরবে চেয়ে রবে,

অতুল অধর দুটি ঈষৎ টুটিয়ে বুঝি

অতি ধীরে দুটি কথা কবে।

আমি কি বুঝি সে ভাষা শুনিতে কি পাব বাণী

সে যেন কিসের প্রতিধ্বনি,

মধুর মোহের মতো যেমনি ছুঁইবে প্রাণ

ঘুমায়ে সে পড়িবে অমনি।

হৃদয়ের দূর হতে সে যেন রে কথা কয়

তাই তার অতি মৃদুস্বর,

বায়ুর হিল্লোলে তাই আকুল কুমুদ-সম

কথাগুলি কাঁপে থর থর।

কে তুমি গো উষাময়ী, আপন কিরণ দিয়ে

আপনারে করেছ গোপন,

রূপের সাগর-মাঝে কোথা তুমি ডুবে আছ

একাকিনী লক্ষ্মীর মতন!

ধীরে ধীরে ওঠো দেখি, একবার চেয়ে দেখি

স্বর্ণজ্যোতি-কমল-আসন,

সুনীল সলিল হতে ধীরে ধীরে উঠে যথা

প্রভাতের বিমল কিরণ।

সৌন্দর্যকোরক টুটে এস গো বাহির হয়ে

অনুপম সৌরভের প্রায়,

আমি তাহে ডুবে যাব সাথে সাথে বহে যাব

উদাসীন বসন্তের বায়।