সন্ধ্যাবেলায় এ কোন্‌ খেলায় করলে নিমন্ত্রণ

ওগো খেলার সাথি!

হঠাৎ কেন চমকে তোলে শূন্য এ প্রাঙ্গণ

রঙিন শিখার বাতি।

কোন্‌ সে ভোরের রঙের খেয়াল কোন্‌ আলোতে ঢেকে

সমস্ত দিন বুকের তলায় লুকিয়ে দিলে রেখে,

অরুণ-আভাস ছানিয়ে নিয়ে পদ্মবনের থেকে

রাঙিয়ে দিলে রাতি?

উদয়-ছবি শেষ হবে কি অস্ত-সোনায় এঁকে

জ্বালিয়ে সাঁঝের বাতি।

হারিয়ে-ফেলা বাঁশি আমার পালিয়েছিল বুঝি

লুকোচুরির ছলে?

বনের পারে আবার তারে কোথায় পেলে খুঁজি

শুকনো পাতার তলে?

যে সুর তুমি শিখিয়েছিলে বসে আমার পাশে

সকালবেলায় বটের তলায় শিশির-ভেজা ঘাসে,

সে আজ ওঠে হঠাৎ বেজে বুকের দীর্ঘশ্বাসে,

উছল চোখের জলে --

কাঁপত যে সুর ক্ষণে ক্ষণে দুরন্ত বাতাসে

শুকনো পাতার তলে।

মোর প্রভাতের খেলার সাথি আনত ভরে সাজি

সোনার চাঁপাফুলে।

অন্ধকারে গন্ধ তারি ওই যে আসে আজি

এ কি পথের ভুলে।

বকুলবীথির তলে তলে আজ কি নতুন বেশে

সেই খেলাতেই ডাকতে এল আবার ফিরে এসে।

সেই সাজি তার দখিন হাতে, তেমনি আকুল কেশে

চাঁপার গুচ্ছ দুলে।

সেই অজানা হতে আসে এই অজানার দেশে,

এ কি পথের ভুলে।

আমার কাছে কী চাও তুমি, ওগো খেলার গুরু,

কেমন খেলার ধারা।

চাও কি তুমি যেমন করে হল দিনের শুরু

তেমনি হবে সারা।

সেদিন ভোরে দেখেছিলাম প্রথম জেগে উঠে

নিরুদ্দেশের পাগল হাওয়ায় আগল গেছে টুটে,

কাজ-ভোলা সব খ্যাপার দলে তেমনি আবার জুটে

করবে দিশেহারা।

স্বপন-মৃগ ছুটিয়ে দিয়ে পিছনে তার ছুটে

তেমনি হব সারা।

বাঁধা পথের বাঁধন মেনে চলতি কাজের স্রোতে

চলতে দেবে নাকো?

সন্ধ্যাবেলায় জোনাক-জ্বালা বনের আঁধার হতে

তাই কি আমায় ডাকো?

সকল চিন্তা উধাও করে অকারণের টানে

অবুঝ ব্যথার চঞ্চলতা জাগিয়ে দিয়ে প্রাণে

থর্‌থরিয়ে কাঁপিয়ে বাতাস ছুটির গানে গানে

দাঁড়িয়ে কোথায় থাকো।

না জেনে পথ পড়ব তোমার বুকেরই মাঝখানে,

তাই আমারে ডাকো।

জানি জানি, তুমি আমার চাও না পূজার মালা

ওগো খেলার সাথি।

এই জনহীন অঙ্গনেতে গন্ধপ্রদীপ জ্বালা,

নয় আরতির বাতি।

তোমার খেলায় আমার খেলা মিলিয়ে দেব তবে

নিশীথিনীর স্তব্ধ সভায় তারার মহোৎসবে,

তোমার বীণার ধ্বনির সাথে আমার বাঁশির রবে

পূর্ণ হবে রাতি।

তোমার আলোয় আমার আলো মিলিয়ে খেলা হবে,

নয় আরতির বাতি।