সন্ধে হল, গৃহ অন্ধকার --

মা গো, হেথায় প্রদীপ জ্বলে না।

একে একে সবাই ঘরে এল,

আমায় যে মা, "মা' কেউ বলে না।

সময় হল, বেঁধে দেব চুল,

পরিয়ে দেব রাঙা কাপড়খানি।

সাঁঝের তারা সাঁঝের গগনে --

কোথায় গেল রানী আমার রানী।

রাত্রি হল, আঁধার করে আসে,

ঘরে ঘরে প্রদীপ নিবে যায়।

আমার ঘরে ঘুম নেইকো শুধু --

শূন্য শেজ শূন্য-পানে চায়।

কোথায় দুটি নয়ন ঘুমে-ভরা,

নেতিয়ে-পড়া ঘুমিয়ে-পড়া মেয়ে।

শ্রান্ত দেহ ঢুলে পড়ে, তবু

মায়ের তরে আছে বুঝি চেয়ে।

আঁধার রাতে চলে গেলি তুই,

আঁধার রাতে চুপি চুপি আয়।

কেউ তো তোরে দেখতে পাবে না,

তারা শুধু তারার পানে চায়।

এ জগৎ কঠিন -- কঠিন --

কঠিন, শুধু মায়ের প্রাণ ছাড়া--

সেইখানে তুই আয় মা, ফিরে আয়--

এত ডাকি, দিবি নে কি সাড়া।

ফুলের দিনে সে যে চলে গেল,

ফুল-ফোটা সে দেখে গেল না,

ফুলে ফুলে ভরে গেল বন

একটি সে তো পরতে পেল না।

ফুল সে ফোটে ফুল যে ঝরে যায়--

ফুল নিয়ে যে আর-সকলে পরে,

ফিরে এসে সে যদি দাঁড়ায়,

একটিও যে রইবে না তার তরে।

খেলত যারা তারা খেলতে গেছে,

হাসত যারা তারা আজো হাসে,

তার তরে তো কেহই বসে নেই,

মা যে কেবল রয়েছে তার আশে।

হায় রে বিধি, সব কি ব্যর্থ হবে--

ব্যর্থ হবে মায়ের ভালোবাসা।

কত জনের কত আশা পূরে,

ব্যর্থ হবে মার প্রাণেরই আশা।