সূর্যান্তদিগন্ত হতে বর্ণচ্ছটা উঠেছে উচ্ছ্বাসি।

দুজনে বসেছে পাশাপাশি।

সমস্ত শরীরে মনে লইতেছে টানি

আকাশের বাণী।

চোখেতে পলক নাই, মুখে নাই কথা,

স্তব্ধ চঞ্চলতা।

একদিন যুগলের যাত্রা হয়েছিল শুরু,

বক্ষ করেছিল দুরু দুরু

অনির্বচনীয় সুখে।

বর্তমান মুহূর্তের দৃষ্টির সম্মুখে

তাদের মিলনগ্রন্থি হয়েছিল বাঁধা।

সে-মুহূর্ত পরিপূর্ণ; নাহি তাহে বাধা,

দ্বন্দ্ব নাই, নাই ভয়,

নাইকো সংশয়।

সে-মুহূর্ত বাঁশির গানের মতো;

অসীমতা তার কেন্দ্রে রয়েছে সংহত।

সে-মুহূর্ত উৎসের মতন;

একটি সংকীর্ণ মহাক্ষণ

উচ্ছলিত দেয় ঢেলে আপনার সবকিছু দান।

সে সম্পদ দেখা দেয় লয়ে নৃত্য, লয়ে গান,

লয়ে সূর্যালোকভরা হাসি,

ফেনিল কল্লোল রাশি রাশি।

সে-মুহূর্তধারা

ক্রমে আজ হল হারা

সুদূরের মাঝে।

সে-সুদূরে বাজে

মহাসমুদ্রের গাথা।

সেইখানে আছে পাতা

বিরাটের মহাসন কালের প্রাঙ্গণে।

সর্ব দুঃখ, সর্ব সুখ মেলে সেথা প্রকাণ্ড মিলনে।

সেথা আকাশের পটে

অস্ত-উদয়ের শৈলতটে

রবিচ্ছবি আঁকিল যে অপরূপ মায়া

তারি সঙ্গে গাঁথা পড়ে রজনীর ছায়া।

সেথা আজ যাত্রী দুইজনে

শান্ত হয়ে চেয়ে আছে সুদূর গগনে।

কিছুতে বুঝিতে নাহি পারে

কেন বারে বারে

দুই চক্ষু ভরে ওঠে জলে।

ভাবনার সুগভীর তলে

ভাবনার অতীত যে-ভাষা

করিয়াছে বাসা

অকথিত কোন্‌ কথা

কী বারতা

কাঁপাইছে বক্ষের পঞ্জরে।

বিশ্বের বৃহৎ বাণী লেখা আছে যে মায়া-অক্ষরে,

তার মধ্যে কতটুকু শ্লোকে

ওদের মিলনলিপি, চিহ্ন তার পড়েছে কি চোখে!