সৃষ্টি-প্রলয়ের তত্ত্ব

লয়ে সদা আছ মত্ত,

দৃষ্টি শুধু আকাশে ফিরিছে;

গ্রহতারকার পথে

যাইতেছ মনোরথে,

ছুটিছ উল্কার পিছে পিছে;

হাঁকায়ে দু-চারিজোড়া

তাজা পক্ষিরাজ-ঘোড়া

কলপনা গগনভেদিনী

তোমারে করিয়া সঙ্গী

দেশকাল যায় লঙ্ঘি,

কোথা প'ড়ে থাকে এ মেদিনী।

সেই তুমি ব্যোমচারী

আকাশ-রবিরে ছাড়ি

ধরার রবিরে কর মনে--

ছাড়িয়া নক্ষত্র গ্রহ

একি আজ অনুগ্রহ

জ্যোতির্হীন মর্তবাসী জনে।

ভুলেছ ভুলেছ কক্ষ,

দূরবীন ভ্রষ্টলক্ষ্য,

কোথা হতে কোথায় পতন।

ত্যজি দীপ্ত ছায়াপথে

পড়িয়াছ কায়াপথে--

মেদ-মাংস-মজ্জা-নিকেতন।

বিধি বড়ো অনুকূল,

মাঝে মাঝে হয় ভুল,

ভুল থাক্‌ জন্ম জন্ম বেঁচে--

তবু তো ক্ষণেকতরে

ধুলিময় খেলাঘরে

মাঝে মাঝে দেখা দাও কেঁচে।

তুমি অদ্য কাশীবাসী,

সম্প্রতি লয়েছ আসি

বাবা ভোলানাথের শরণ;

দিব্য নেশা জমে ওঠে,

দু বেলা প্রসাদ জোটে,

বিধিমতে ধূমোপকরণ।

জেগে উঠে মহানন্দ

খুলে যায় ছন্দোবন্ধ,

ছুটে যায় পেন্সিল উদ্দাম--

পরিপূর্ণ ভাবভরে

লেফাফা ফাটিয়া পড়ে,

বেড়ে যায় ইস্টাম্পের দাম।

আমার সে কর্ম নাস্তি,

দারুণ দৈবের শাস্তি,

শ্লেষ্মা-দেবী চেপেছেন বক্ষে--

সহজেই দম কম,

তাহে লাগাইলে দম

কিছুতে রবে না আর রক্ষে।

নাহি গান, নাহি বাঁশি,

দিনরাত্রি শুধু কাশি,

ছন্দ তাল কিছু নাহি তাহে;

নবরস কবিত্বের

চিত্তে জমা ছিল ঢের,

বহে গেল সর্দির প্রবাহে।

অতএব নমোনম,

অধম অক্ষমে ক্ষম,

ভঙ্গ আমি দিনু ছন্দরণে--

মগধে কলিঙ্গে গৌড়ে

কল্পনার ঘোড়দৌড়ে

কে বলো পারিবে তোমা-সনে।