সেদিন ছিলে তুমি আলো-আঁধারের মাঝখানটিতে,

বিধাতার মানসলোকের

মর্ত্যসীমায় পা বাড়িয়ে

বিশ্বের রূপ-আঙিনার নাছদুয়ারে।

যেমন ভোরবেলার একটুখানি ইশারা,

শালবনের পাতার মধ্যে উসুখুসু,

শেষরাত্রের গায়ে-কাঁটা-দেওয়া

আলোর আড়-চাহনি;

উষা যখন আপন-ভোলা--

যখন সে পায় নি আপন ডাক-নামটি পাখির ডাকে,

পাহাড়ের চূড়ায়, মেঘের লিখনপত্রে।

তার পরে সে নেমে আসে ধরাতলে,

তার মুখের উপর থেকে

অসীমের ছায়া-ঘোমটা খসে পড়ে

উদয়-সাগরের অরুণরাঙা কিনারায়।

পৃথিবী তাকে সাজিয়ে তোলে

আপন সবুজ-সোনার কাঁচলি দিয়ে;

পরায় তাকে আপন হাওয়ার চুনরি।

তেমনি তুমি এনেছিলে তোমার ছবির তনুরেখাটুকু

আমার হৃদয়ের দিক্‌প্রান্তপটে।

আমি তোমার কারিগরের দোসর,

কথা ছিল তোমার রূপের 'পরে মনের তুলি

আমিও দেব বুলিয়ে,

পুরিয়ে তুলব তোমার গড়নটিকে।

দিনে দিনে তোমাকে রাঙিয়েছি

আমার ভাবের রঙে।

আমার প্রাণের হাওয়া

বইয়ে দিয়েছি তোমার চারি দিকে

কখনো ঝড়ের বেগে

কখনো মৃদুমৃদু দোলনে।

একদিন আপন সহজ নিরালায় ছিলে তুমি অধরা,

ছিলে তুমি একলা বিধাতার;

একের মধ্যে একঘরে।

আমি বেঁধেছি তোমাকে দুয়ের গ্রন্থিতে,

তোমার সৃষ্টি আজ তোমাতে আর আমাতে,

তোমার বেদনায় আর আমার বেদনায়।

আজ তুমি আপনাকে চিনেছ

আমার চেনা দিয়ে।

আমার অবাক চোখ লাগিয়েছে সোনার কাঠির ছোঁওয়া,

জাগিয়েছে আনন্দরূপ

তোমার আপন চৈতন্যে।