হনু বলে, তুলব আমি গন্ধমাদন,

অসাধ্য যা তাই জগতে করব সাধন।

এই ব'লে তার প্রকাণ্ড কায় উঠল ফুলে।

মাথাটা তার কোথায় গিয়ে ঠেকল মেঘে,

শালের গুঁড়ি ভাঙল পায়ের ধাক্কা লেগে,

দশটা পাহাড় ঢাকল তাহার দশ আঙুলে।

পড়ল বিপুল দেহের ছায়া যে দিক বাগে

দুপুর-বেলায় সেথায় যেন সন্ধ্যা লাগে,

গোরু যত মাঠ ছেড়ে সব গোষ্ঠে ছোটে।

সেই দিকেতে সূর্যহারা আকাশ-তলে

দিন না যেতেই অন্ধকারের তারা জ্বলে,

শেয়ালগুলো হুক্কাহুয়া চেঁচিয়ে ওঠে।

লেজ বেড়ে যায় হু হু ক'রে এঁকে বেঁকে,

লেজের মধ্যে বন্যা নামল কোথা থেকে,

নগর পল্লী তলায় তাহার চাপা পড়ে।

হঠাৎ কখন্‌ মস্ত মোটা লেজের বাধায়

নদীর স্রোতের মধ্যখানে বাঁধ বেঁধে যায়,

উপড়ে পড়ে দেবদারুবন লেজের ঝড়ে।

লেজের পাকে পাহাড়টাকে দিল মোড়া,

ঝেঁকে ঝেঁকে উঠল কেঁপে আগাগোড়া,

দুড়্‌দাড়িয়ে পাথর পড়ে খ'সে খ'সে।

গিরির চূড়া এক পাশেতে পড়ল ঝুঁকি,

অরণ্যে হয় গাছে গাছে ঠোকাঠুকি,

আগুন লাগে শাখায় শাখায় ঘ'ষে ঘ'ষে।

পক্ষী সবে আর্তরবে বেড়ায় উড়ে,

বাঘ-ভালুকের ছুটোছুটি পাহাড় জুড়ে,

ঝর্নাধারা ছড়িয়ে গেল ঝর্‌ঝরিয়ে।

উপুড় হয়ে গন্ধমাদন পড়ল লুটে,

বসুন্ধরার পাষাণ-বাঁধন যায় রে টুটে।

ভীষণ শব্দে দিগ্‌দিগন্ত থর্‌থরিয়ে

ঘূর্ণিধুলা নৃত্য করে অম্বরেতে,

ঝঞ্ঝাহাওয়া হুংকারিয়া বেড়ায় মেতে,

ধূসর রাত্রি লাগল যেন দিগ্‌বিদিকে।

গন্ধমাদন উড়ল হনুর পৃষ্ঠে চেপে,

লাগল হনুর লেজের ঝাপট আকাশ ব্যেপে--

অন্ধকারে দন্ত তাহার ঝিকিমিকে।