হেঁকে উঠল ঝড়,

লাগালো প্রচণ্ড তাড়া,

সূর্যাস্তসীমার রঙিন পাঁচিল ডিঙিয়ে

ব্যস্ত বেগে বেরিয়ে পড়ল মেঘের ভিড়,

বুঝি ইন্দ্রলোকের আগুন-লাগা হাতিশালা থেকে

গাঁ গাঁ শব্দে ছুটছে ঐরাবতের কালো কালো শাবক

শুঁড় আছড়িয়ে ।

মেঘের গায়ে গায়ে দগ্‌ দগ্‌ করছে লাল আলো,

তার ছিন্ন ত্বকের রক্তরেখা ।

বিদ্যুৎ লাফ মারছে মেঘের থেকে মেঘে,

চালাচ্ছে ঝক্‌ঝকে খাঁড়া;

বজ্রশব্দে গর্জে উঠছে দিগন্ত;

উত্তরপশ্চিমের আম-বাগানে শোনা গেল হাঁফ-ধরা একটা আওয়াজ,

এসে পড়ল পাটকিলে রঙের অন্ধকার,

শুকনো ধুলোর দম-আটকানো তুফান ।

বাতাসের ঝট্‌কা আসে

ছুঁড়ে মারে টুকরো ডাল শুকনো পাতা,

চোখে-মুখে ছিটোতে থাকে কাঁকরগুলো;

আকাশটা ভূতে-পাওয়া ।

পথিক উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে মাটিতে,

ঘন আঁধির ভিতর থেকে উঠছে ঘরহারা গোরুর উতরোল ডাক,

দূরে নদীর ঘাটে হৈ হৈ রব ।

বোঝা গেল না কোন্‌ দিকে হুড়্‌মুড়্‌ দুড়্‌দাড়্‌ ক'রে

কিসের ওটা ভাঙচুর ।

দুর্‌দুর্‌ করে বুক,

কী হল, কী হল ভাবনা ।

কাকগুলো পড়েছে মুখ থুবড়িয়ে মাটিতে,

ঠোঁট দিয়ে ঘাস ধরছে কামড়িয়ে,

ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে সরে সরে,

ঝট্‌পট্‌ করছে পাখাদুটো ।

নদীপথে ঝড়ের মুখে বাঁশঝাড়ের লুটোপুটি,

ডালগুলো ডাইনে বাঁয়ে আছাড় খায়,

দোহাই পাড়ে মরিয়া হয়ে ।

তীক্ষ্ণ হাওয়া সাঁই সাঁই শান দিচ্ছে আর চালাচ্ছে ছুরি

অন্ধকারের পাঁজরের ভিতর দিয়ে ।

জলে স্থলে শূন্যে উঠেছে

ঘুরপাক-খাওয়া আতঙ্ক ।

হঠাৎ সোঁদা গন্ধের দীর্ঘনিশ্বাস উঠল মাটি থেকে ,

মহূর্তে এসে পড়ল বৃষ্টি প্রবল ঝাপটায়,

হাওয়ার চোটে গুঁড়োনো জলের ফোঁটা,

পাতলা পর্দায় ঢেকে ফেললে সমস্ত বন,

আড়াল করলে মন্দিরের চুড়ো,

কাঁসর-ঘন্টার ঢং ঢং শব্দের দিল মুখচাপা ।

রাত তিন পহরে থেমে গেল ঝড়বৃষ্টি,

কালি হয়ে এল অন্ধকার নিকষ-পাথরের মতো;

কেবলই চলল ব্যাঙের ডাক,

ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ,

জোনাকির মিটিমিটি আলো,

আর যেন স্বপ্নে-আঁতকে-ওঠা দমকা হাওয়ায়

থেকে থেকে জল-ঝরা ঝাউয়ের ঝর্‌ঝরানি।