হেথা হতে যাও, পুরাতন।

হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে।

আবার বাজিছে বাঁশি, আবার উঠিছে হাসি,

বসন্তের বাতাস বয়েছে।

সুনীল আকাশ- 'পরে শুভ্র মেঘ থরে থরে

শ্রান্ত যেন রবির আলোকে,

পাখিরা ঝাড়িছে পাখা, কাঁপিছে তরুর শাখা,

খেলাইছে বালিকা বালকে।

সমুখের সরোবরে আলো ঝিকিমিকি করে,

ছায়া কাঁপিতেছে থরথর,

জলের পানেতে চেয়ে ঘাটে বসে আছে মেয়ে,

শুনিছে পাতার মরমর।

কী জানি কত কী আশে চলিয়াছে চারি পাশে

কত লোক কত সুখে দুখে,

সবাই তো ভুলে আছে, কেহ হাসে কেহ নাচে,

তুমি কেন দাঁড়াও সমুখে।

বাতাস যেতেছে বহি, তুমি কেন রহি রহি

তারি মাঝে ফেল দীর্ঘশ্বাস।

সুদূরে বাজিছে বাঁশি, তুমি কেন ঢাল আসি

তারি মাঝে বিলাপ-উচ্ছ্বাস।

উঠেছে প্রভাত-রবি, আঁকিছে সোনার ছবি,

তুমি কেন ফেল তাহে ছায়া।

বারেক যে চলে যায় তারে তো কেহ না চায়,

তবু তার কেন এত মায়া।

তবু কেন সন্ধ্যাকালে জলদের অন্তরালে

লুকায়ে ধরার পানে চায়--

নিশীথের অন্ধকারে পুরানো ঘরের দ্বারে

কেন এসে পুন ফিরে যায়।

কী দেখিতে আসিয়াছ! যাহা কিছু ফেলে গেছ

কে তাদের করিবে যতন।

স্মরণের চিহ্ন যত ছিল পড়ে দিন-কত

ঝরে-পড়া পাতার মতন

আজি বসন্তের বায় একেকটি করে হায়

উড়ায়ে ফেলিছে প্রতিদিন

ধূলিতে মাটিতে রহি হাসির কিরণে দহি

ক্ষণে ক্ষণে হতেছে মলিন।

ঢাকো তবে ঢাকো মুখ, নিয়ে যাও দুঃখ সুখ,

চেয়ো না চেয়ো না ফিরে ফিরে।

হেথায় আলয় নাহি, অনন্তের পানে চাহি

আঁধারে মিলাও ধীরে ধীরে।