আমার ঘরের সম্মুখেই

পাকে পাকে জড়িয়ে শিমূলগাছে

উঠেছে মালতীলতা।

আষাঢ়ের রসস্পর্শ

লেগেছে অন্তরে তার।

সবুজ তরঙ্গগুলি হয়েছে উজ্জ্বল

পল্লবের চিক্কণ হিল্লোলে।

বাদলের ফাঁকে ফাঁকে মেঘচ্যুত রৌদ্র এসে

ছোঁয়ায় সোনার-কাঠি অঙ্গে তার,

মজ্জায় কাঁপন লাগে,

শিকড়ে শিকড়ে বাজে আগমনী।

যেন কত-কী-যে কথা নীরবে উৎসুক হয়ে থাকে

শাখাপ্রশাখায়।

এই মৌনমুখরতা

সারারাত্রি অন্ধকারে

ফুলের বাণীতে হয় উচ্ছ্বসিত,

ভোরের বাতাসে উড়ে পড়ে।

আমি একা বসে বসে ভাবি

সকালের কচি আলো দিয়ে রাঙা

ভাঙা ভাঙা মেঘের সমুখে;

বৃষ্টিধোওয়া মধ্যাহ্নের

গোরু-চরা মাঠের উপর আঁখি রেখে,

নিবিড় বর্ষণে আর্ত

শ্রাবণের আর্দ্র অন্ধকার রাতে;

নানা কথা ভিড় করে আসে

গহন মনের পথে,

বিবিধ রঙের সাজ,

বিবিধ ভঙ্গিতে আসাযাওয়া, --

অন্তরে আমার যেন

ছুটির দিনের কোলাহলে

কথাগুলো মেতেছে খেলায়।

তবুও যখন তুমি আমার আঙিনা দিয়ে যাও

ডেকে আনি, কথা পাই নে তো।

কখনো যদি বা ভুলে কাছে আস

বোবা হয়ে থাকি।

অবারিত সহজ আলাপে

সহজ হাসিতে

হল না তোমার অভ্যর্থনা।

অবশেষে ব্যর্থতার লজ্জায় হৃদয় ভরে দিয়ে

তুমি চলে যাও ,

তখন নির্জন অন্ধকারে

ফুটে ওঠে ছন্দে-গাঁথা সুরে-ভরা বাণী;

পথে তারা উড়ে পড়ে-

যার খুশি সাজি ভরে নিয়ে চলে যায়।