আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,

চুনি উঠল রাঙা হয়ে।

আমি চোখ মেললুম আকাশে,

জ্বলে উঠল আলো

পুবে পশ্চিমে।

গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম "সুন্দর',

সুন্দর হল সে।

তুমি বলবে, এ যে তত্ত্বকথা,

এ কবির বাণী নয়।

আমি বলব, এ সত্য,

তাই এ কাব্য।

এ আমার অহংকার,

অহংকার সমস্ত মানুষের হয়ে।

মানুষের অহংকার-পটেই

বিশ্বকর্মার বিশ্বশিল্প।

তত্ত্বজ্ঞানী জপ করছেন নিশ্বাসে প্রশ্বাসে,

না, না, না--

না-পান্না, না-চুনি, না-আলো, না-গোলাপ,

না-আমি, না-তুমি।

ও দিকে, অসীম যিনি তিনি স্বয়ং করেছেন সাধনা

মানুষের সীমানায়,

তাকেই বলে "আমি'।

সেই আমির গহনে আলো-আঁধারের ঘটল সংগম,

দেখা দিল রূপ, জেগে উঠল রস।

"না' কখন ফুটে উঠে হল "হাঁ' মায়ার মন্ত্রে,

রেখায় রঙে সুখে দুঃখে।

একে বোলো না তত্ত্ব;

আমার মন হয়েছে পুলকিত

বিশ্ব-আমির রচনার আসরে

হাতে নিয়ে তুলি, পাত্রে নিয়ে রঙ।

পণ্ডিত বলছেন--

বুড়ো চন্দ্রটা, নিষ্ঠুর চতুর হাসি তার,

মৃত্যুদূতের মতো গুঁড়ি মেরে আসছে সে

পৃথিবীর পাঁজরের কাছে।

একদিন দেবে চরম টান তার সাগরে পর্বতে;

মর্তলোকে মহাকালের নূতন খাতায়

পাতা জুড়ে নামবে একটা শূন্য,

গিলে ফেলবে দিনরাতের জমাখরচ;

মানুষের কীর্তি হারাবে অমরতার ভান,

তার ইতিহাসে লেপে দেবে

অনন্ত রাত্রির কালি।

মানুষের যাবার দিনের চোখ

বিশ্ব থেকে নিকিয়ে নেবে রঙ,

মানুষের যাবার দিনের মন

ছানিয়ে নেবে রস!

শক্তির কম্পন চলবে আকাশে আকাশে,

জ্বলবে না কোথাও আলো।

বীণাহীন সভায় যন্ত্রীর আঙুল নাচবে,

বাজবে না সুর।

সেদিন কবিত্বহীন বিধাতা একা রবেন বসে

নীলিমাহীন আকাশে

ব্যক্তিত্বহারা অস্তিত্বের গণিততত্ত্ব নিয়ে।

তখন বিরাট বিশ্বভুবনে

দূরে দূরান্তে অনন্ত অসংখ্য লোকে লোকান্তরে

এ বাণী ধ্বনিত হবে না কোনোখানেই--

"তুমি সুন্দর',

"আমি ভালোবাসি'।

বিধাতা কি আবার বসবেন সাধনা করতে

যুগযুগান্তর ধ'রে।

প্রলয়সন্ধ্যায় জপ করবেন--

"কথা কও, কথা কও',

বলবেন "বলো, তুমি সুন্দর',

বলবেন "বলো, আমি ভালোবাসি'?