আরবার কোলে এল শরতের

শুভ্র দেবশিশু, মরতের

সবুজ কুটীরে। আরবার বুঝিতেছি মনে--

বৈকুণ্ঠের সুর যবে বেজে ওঠে মর্তের গগনে

মাটির বাঁশিতে, চিরন্তন রচে খেলাঘর

অনিত্যের প্রাঙ্গণের 'পর,

তখন সে সম্মিলিত লীলারস তারি

ভরে নিই যতটুকু পারি

আমার বাণীর পাত্রে, ছন্দের আনন্দে তারে

বহে নিই চেতনার শেষ পারে,

বাক্য আর বাক্যহীন

সত্যে আর স্বপ্নে হয় লীন।

দ্যুলোকে ভূলোকে মিলে শ্যামলে সোনায়

মন্ত্র রেখে দিয়ে গেছে বর্ষে বর্ষে আঁখির কোণায়।

তাই প্রিয়মুখে

চক্ষু যে পরশটুকু পায়, তার দুঃখে সুখে

লাগে সুধা, লাগে সুর;

তার মাঝে সে রহস্য সুমধুর

অনুভব করি

যাহা সুগভীর আছে ভরি

কচি ধানখেতে--

রিক্ত প্রান্তরের শেষে অরণ্যের নীলিম সংকেতে,

আমলকীপল্লবের পেলব উল্লাসে,

মঞ্জরিত কাশে,

অপরাহ্নকাল

তুলিয়া গেরুয়াবর্ণ পাল

পাণ্ডুপীত বালুতট বেয়ে বেয়ে

যায় ধেয়ে

তন্বী তরী গতির বিদ্যুতে

হেলে পড়ে যে রহস্য সে ভঙ্গিটুকুতে,

চটুল দোয়েল পাখি সবুজেতে চমক ঘটায়

কালো আর সাদার ছটায়

অকস্মাৎ ধায় দ্রুত শিরীষের উচ্চ শাখা-পানে

চকিত সে ওড়াটিতে যে রহস্য বিজড়িত গানে।

হে প্রেয়সী, এ জীবনে

তোমারে হেরিয়াছিনু যে নয়নে

সে নহে কেবলমাত্র দেখার ইন্দ্রিয়,

সেখানে জ্বেলেছে দীপ বিশ্বের অন্তরতম প্রিয়।

আঁখিতারা সুন্দরের পরশমণির মায়া-ভরা,

দৃষ্টি মোর সে তো সৃষ্টি-করা।

তোমার যে সত্তাখানি প্রকাশিলে মোর বেদনায়

কিছু জানা কিছু না-জানায়,

যারে লয়ে আলো আর মাটিতে মিতালি,

আমার ছন্দের ডালি

উৎসর্গ করেছি তারে বারে বারে--

সেই উপহারে

পেয়েছে আপন অর্ঘ্য ধরণীর সকল সুন্দর।

আমার অন্তর

রচিয়াছে নিভৃত কুলায়

স্বর্গের-সোহাগে-ধন্য পবিত্র ধুলায়।