এ-বৎসর দোলপূর্ণিমা ফাল্গুন পার হয়ে চৈত্রে পৌঁছল। আমের মুকুল নিঃশেষিত, আমবাগানে মৌমাছির ভিড় নেই, পলাশ-ফোটার পালা ফুরল, গাছের তলায় শুকনো শিমূল তার শেষমধু পিঁপড়েদের বিলিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছে। কাঞ্চনশাখা প্রায় দেউলে, ঐশ্বর্যের অল্প কিছু বাকি। কেবল শালের বীথিকা ভরে উঠেছে মঞ্জরিতে। উৎসব-প্রভাতে আশ্রমকন্যারা ঋতুরাজের সিংহাসন প্রদক্ষিণ করলে এই পুষ্পিত শালের বনে, তার বল্কলে আবির মাখিয়ে দিলে, তার ছায়ায় রাখলে মাল্যপ্রদীপের অর্ঘ্য। চতুর্দশীর চাঁদ যখন অস্তদিগন্তে, প্রভাতের ললাটে যখন অরুণ-আবিরের তিলকরেখা ফুটে উঠল, তখন আমি এই ছন্দের নৈবেদ্য বসন্ত-উৎসবের বেদির জন্য রচনা করেছি।

আশ্রমসখা হে শাল, বনস্পতি,

লহো আমাদের নতি।

তুমি এসেছিলে মোদের সবার আগে

প্রাণের পতাকা রাঙায়ে হরিৎরাগে,

সংগ্রাম তব কত ঝঞ্ঝার সাথে,

কত দুর্দিনে কত দুর্যোগরাতে

জয়গৌরবে ঊর্ধ্বে তুলিলে শির

হে বীর, হে গম্ভীর।

তোমার প্রথম অতিথি বনের পাখি,

শাখায় শাখায় নিলে তাহাদের ডাকি,

স্নিগ্ধ আদরে গানেরে দিয়েছ বাসা,

মৌন তোমার পেয়েছে আপন ভাষা,

সুরে কিশলয়ে মিলন ঘটালে তুমি --

মুখরিত হল তোমার জন্মভূমি

আমরা যেদিন আসন নিলেম আসি

কহিল স্বাগত তব পল্লবরাশি,

তারপর হতে পরিচয় নব নব

দিবসরাত্রি ছায়াবীথিতলে তব

মিলিল আসিয়া নানা দিগ্‌দেশ হতে

তরুণ জীবনস্রোতে।

বৈশাখতাপ শান্ত শীতল করো,

নববর্ষারে করি দাও ঘনতর,

শুভ্র শরতে জ্যোৎস্নার রেখাগুলি

ছায়ায় মিলায়ে সাজাও বনের ধূলি,

মধুলক্ষ্মীরে আনিয়াছে আহ্বানি

মঞ্জরিভরা সুন্দর তব বাণী।

নীরব বন্ধু, লহো আমাদের প্রীতি,

আজি বসন্তে লহো এ কবির গীতি,

কোকিলকাকলি শিশুদের কলরবে

মিলেছে অS এ তব জয়-উৎসবে,

তোমার গন্ধে মোর আনন্দে আজি

এ পুণ্যদিনে অর্ঘ্য উঠিল সাজি।

গম্ভীর তুমি, সুন্দর তুমি, উদার তোমার দান,

লহো আমাদের গান।