অন্ধকারে জানি না কে এল কোথা হতে--

মনে হল তুমি;

রাতের লতা-বিতান তারার আলোতে

উঠিল কুসুমি।

সাক্ষ্য আর কিছু নাই, আছে শুধু একটি স্বাক্ষর,

প্রভাত-আলোক তলে মগ্ন হলে প্রসুপ্ত প্রহর

পড়িব তখন।

ততক্ষণ পূর্ণ করি থাক মোর নিস্তব্ধ অন্তর

তোমার স্মরণ।

কত লোক ভিড় করে জীবনের পথে

উড়াইয়া ধূলি;

কত যে পতাকা ওড়ে কত রাজপথে

আকাশ আকুলি।

প্রহরে প্রহরে যাত্রী ধেয়ে চলে খেয়ার উদ্দেশে--

অতিথি আশ্রয় মাগে শ্রান্তদেহে মোর দ্বারে এসে

দিন-অবসানে,

দূরের কাহিনী বলে, তার পরে রজনীর শেষে

যায় দূর-পানে।

মায়ার আবর্তে রচে আসায় যাওয়ায়

চঞ্চল সংসারে।

ছায়ার তরঙ্গ যেন ধাইছে হাওয়ায়

ভাঁটায় জোয়ারে।

ঊর্ধ্বকণ্ঠে ডাকে কেহ, স্তব্ধ কেহ ঘরে এসে বসে--

প্রত্যহের জানাশোনা, তবু তারা দিবসে দিবসে

পরিচয়হীন।

এই কুজ্ঝটিকালোকে লুপ্ত হয়ে স্বপ্নের তামসে

কাটে জীর্ণ দিন।

সন্ধ্যার নৈঃশব্দ্য উঠে সহসা শিহরি;

না কহিয়া কথা

কখন যে আস কাছে, দাও ছিন্ন করি

মোর অস্পষ্টতা।

তখন বুঝিতে পারি, আছি আমি একান্তই আছি

মহাকালদেবতার অন্তরের অতি কাছাকাছি

মহেন্দ্রমন্দিরে;

জাগ্রত জীবনলক্ষ্মী পরায় আপন মাল্যগাছি

উন্নমিত শিরে।

তখনই বুঝিতে পারি, বিশ্বের মহিমা

উচ্ছ্বসিয়া উঠি

রাখিল সত্তায় মোর রচি নিজ সীমা

আপন দেউটি।

সৃষ্টির প্রাঙ্গণতলে চেতনার দীপশ্রেণী-মাঝে

সে দীপে জ্বলেছে শিখা উৎসবের ঘোষণার কাজে;

সেই তো বাগানে,

অনির্বচনীয় প্রেম অন্তহীন বিস্ময়ে বিরাজে

দেহে মনে প্রাণে।