এই দেহখানা বহন করে আসছে দীর্ঘকাল

বহু ক্ষুদ্র মহূর্তের রাগদ্বেষ ভয়ভাবনা

কামনার আবর্জনারাশি ।

এর আবিল আবরণে বারে বারে ঢাকা পড়ে

আত্মার মুক্তরূপ ।

এ সত্যের মুখোশ প'রে সত্যকে আড়ালে রাখে;

মৃত্যুর কাদামাটিতেই গড়ে আপনার পুতুল,

তবু তার মধ্যে মৃত্যুর আভাস পেলেই

নালিশ করে আর্তকন্ঠে ।

খেলা করে নিজেকে ভোলাতে,

কেবলই ভুলতে চায় যে সেটা খেলা ।

প্রাণপণ সঞ্চয়ে রচনা করে মরণের অর্ঘ্য;

স্তুতিনিন্দার বাষ্পবুদবুদে ফেনিল হয়ে

পাক খায় ওর হাসিকান্নার আবর্ত ।

বক্ষ ভেদ ক'রে ও হাউইয়ের আগুন দেয় ছুটিয়ে,

শূন্যের কাছ থেকে ফিরে পায় ছাই ---

দিনে দিনে তাই করে স্তূপাকার ।

প্রতিদিন যে প্রভাতে পৃথিবী

প্রথম সৃষ্টির অক্লান্ত নির্মল দেববেশে দেয় দেখা,

আমি তার উন্মীলিত আলোকের অনুসরণ করে

অন্বেষণ করি আপন অন্তরলোক ।

অসংখ্য দণ্ড পল নিমেষের জটিল মলিন জালে বিজড়িত

দেহটাকে সরিয়ে ফেলি মনের থেকে

যেখানে সরে যায় অন্ধকার রাতের

নানা ব্যর্থ ভাবনার অত্যুক্তি,

যায় বিস্মৃত দিনের অনবধানে পুঞ্জিত লেখন যত -

সেই-সব নিমন্ত্রণলিপি নীরব যার আহ্বান,

নিঃশেষিত যার প্রত্যুত্তর।

তখন মনে পড়ে, সবিতা,

তোমার কাছে ঋষিকবির প্রার্থনামন্ত্র,

যে মন্ত্রে বলেছিলেন,হে পূষণ,

তোমার হিরন্ময় পাত্রে সত্যের মুখ আচ্ছন্ন,

উন্মুক্ত করো সেই আবরণ ।

আমিও প্রতিদিন উদয়দিগ্‌বলয় থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মিচ্ছটায়

প্রসারিত করে দিই আমার জাগরণ;

বলি, হে সবিতা,

সরিয়ে দাও আমার এই দেহ,এই আচ্ছাদন --

তোমার তেজোময় অঙ্গের সূক্ষ্ণ অগ্নিকণায়

রচিত যে-আমার দেহের অণুপরমাণু,

তারও অলক্ষ্য অন্তরে আছে তোমার কল্যাণতম রূপ,

তাই প্রকাশিত হোক আমার নিরাবিল দৃষ্টিতে ।

আমার অন্তরতম সত্য

আদি যুগে অব্যক্ত পৃথিবীর সঙ্গে

তোমার বিরাটে ছিল বিলীন,

সেই সত্য তোমারই ।

তোমার জ্যোতির স্তিমিত কেন্দ্রে মানুষ

আপনার মহৎস্বরূপকে দেখেছে কালে কালে,

কখনো নীল-মহানদীর তীরে,

কখনো পারস্যসাগরের কূলে,

কখনো হিমাদ্রিগিরিতটে --

বলেছে "জেনেছি আমরা অমৃতের পুত্র',

বলেছে "দেখেছি অন্ধকারের পার হতে

আদিত্যবর্ণ মহান পুরুষের আবির্ভাব' ।