এই বিদেশের রাস্তা দিয়ে ধুলোয় আকাশ ঢেকে

গাড়ি আমার চলতেছিল হেঁকে।

হেনকালে নেবুর ডালে স্নিগ্ধ ছায়ায় উঠল কোকিল ডেকে

পথকোণের ঘন বনের থেকে।

এই পাখিটির স্বরে

চিরদিনের সুর যেন এই একটি দিনের 'পরে

বিন্দু বিন্দু ঝরে

ছেলেবেলায় গঙ্গাতীরে আপন-মনে চেয়ে জলের পানে

শুনেছিলেম পল্লীতলে, এই কোকিলের গানে

অসীমকালের অনির্বচনীয়

প্রাণে আমার শুনিয়েছিল, "তুমি আমার প্রিয়।'

সেই ধ্বনিটি কানন ব্যেপে পল্লবে পল্লবে

জলের কলরবে

ওপার-পানে মিলিয়ে যেত সুদূর নীলাকাশে।

আজ এই পরবাসে

সেই ধ্বনিটি ক্ষুব্ধ পথের পাশে

গোপন শাখার ফুলগুলিরে দিল আপন বাণী।

বনচ্ছায়ার শীতল শান্তিখানি

প্রভাত-আলোর সঙ্গে করে নিবিড় কানাকানি

ওই বাণীটির বিমল সুরে গভীর রমণীয়,--

"তুমি আমার প্রিয়।'

এরি পাশেই নিত্য হানাহানি;

প্রতারণার ছুরি

পাঁজর কেটে করে চুরি

সরল বিশ্বাস;

কুটিল হাসি ঘটিয়ে তোলে জটিল সর্বনাশ।

নিরাশ দুঃখে চেয়ে দেখি পৃথ্বীব্যাপী মানববিভীষিকা

জ্বালায় মানবলোকালয়ে প্রলয়বহ্নিশিখা,

লোভের জালে বিশ্বজগৎ ঘেরে,

ভেবে না পাই কে বাঁচাবে আপন-হানা অন্ধ মানুষেরে।

হেনকালে স্নিগ্ধ ছায়ায় হঠাৎ কোকিল ডাকে

ফুল্ল অশোকশাখে;

পরশ করে প্রাণে

যে শান্তিটি সব-প্রথমে, যে শান্তিটি সবার অবসানে,

যে শান্তিতে জানায় আমায় অসীম কালের অনির্বচনীয়--

"তুমি আমার প্রিয়।'