একটি মেয়ে আছে জানি,

পল্লীটি তার দখলে,

সবাই তারি পুজো জোগায়

লক্ষ্মী বলে সকলে।

আমি কিন্তু বলি তোমায়

কথায় যদি মন দেহ --

খুব যে উনি লক্ষ্মী মেয়ে

আছে আমার সন্দেহ।

ভোরের বেলা আঁধার থাকে,

ঘুম যে কোথা ছোটে ওর --

বিছানাতে হুলুস্থুলু

কলরবের চোটে ওর।

খিল্‌খিলিয়ে হাসে শুধু

পাড়াসুদ্ধ জাগিয়ে,

আড়ি করে পালাতে যায়

মায়ের কোলে না গিয়ে।

হাত বাড়িয়ে মুখে সে চায়,

আমি তখন নাচারই,

কাঁধের 'পরে তুলে তারে

ক'রে বেড়াই পাচারি।

মনের মতো বাহন পেয়ে

ভারি মনের খুশিতে

মারে আমায় মোটা মোটা

নরম নরম ঘুষিতে।

আমি ব্যস্ত হয়ে বলি --

"একটু রোসো রোসো মা।'

মুঠো করে ধরতে আসে

আমার চোখের চশমা।

আমার সঙ্গে কলভাষায়

করে কতই কলহ।

তুমুল কাণ্ড! তোমরা তারে

শিষ্ট আচার বলহ?

তবু তো তার সঙ্গে আমার

বিবাদ করা সাজে না।

সে নইলে যে তেমন ক'রে

ঘরের বাঁশি বাজে না।

সে না হলে সকালবেলায়

এত কুসুম ফুটবে কি।

সে না হলে সন্ধেবেলায়

সন্ধেতারা উঠবে কি।

একটি দণ্ড ঘরে আমার

না যদি রয় দুরন্ত

কোনোমতে হয় না তবে

বুকের শূন্য পূরণ তো।

দুষ্টুমি তার দখিন-হাওয়া

সুখের তুফান-জাগানে

দোলা দিয়ে যায় গো আমার

হৃদয়ের ফুল-বাগানে।

নাম যদি তার জিজ্ঞেস কর

সেই আছে এক ভাবনা,

কোন্‌ নামে যে দিই পরিচয়

সে তো ভেবেই পাব না।

নামের খবর কে রাখে ওর,

ডাকি ওরে যা-খুশি --

দুষ্টু বল, দস্যি বল,

পোড়ারমুখী, রাক্ষুসি।

বাপ-মায়ে যে নাম দিয়েছে

বাপ-মায়েরই থাক্‌ সে নয়।

ছিষ্টি খুঁজে মিষ্টি নামটি

তুলে রাখুন বাক্সে নয়।

একজনেতে নাম রাখবে

কখন অন্নপ্রাশনে,

বিশ্বসুদ্ধ সে নাম নেবে --

ভারি বিষম শাসন এ।

নিজের মনের মতো সবাই

করুন কেন নামকরণ --

বাবা ডাকুন চন্দ্রকুমার,

খুড়ো ডাকুন রামচরণ।

ঘরের মেয়ে তার কি সাজে

সঙস্কৃত নামটা ওই।

এতে কারো দাম বাড়ে না

অভিধানের দামটা বৈ।

আমি বাপু, ডেকেই বসি

যেটাই মুখে আসুক-না --

যারে ডাকি সেই তা বোঝে,

আর সকলে হাসুক-না--

একটি ছোটো মানুষ তাহার

একশো রকম রঙ্গ তো।

এমন লোককে একটি নামেই

ডাকা কি হয় সংগত।