একদা বসন্তে মোর বনশাখে যবে

মুকুলে পল্লবে

উদ্‌বারিত আনন্দের আমন্ত্রণ

গন্ধে বর্ণে দিল ব্যাপি ফাল্গুনের পবন গগন,

সেদিন এসেছে যারা বীথিকায়--

কেহ এল কুণ্ঠিত দ্বিধায়;

চটুল চরণ কারো তৃণে তৃণে বাঁকিয়া বাঁকিয়া

নির্দয় দলনচিহ্ন গিয়েছে আঁকিয়া

অসংকোচ নূপুরঝংকারে,

কটাক্ষের খরধারে

উচ্চহাস্য করেছে শাণিত;

কেহ বা করেছে ম্লান অমানিত

অকারণ সংশয়েতে আপনারে

অবগুণ্ঠনের অন্ধকারে;

কেহ তারা নিয়েছিল তুলি

গোপনে ছায়ায় ফিরি তরুতলে ঝরা ফুলগুলি;

কেহ ছিন্ন করি

তুলেছিল মাধবীমঞ্জরী,

কিছু তার পথে পথে ফেলেছে ছড়ায়ে,

কিছু তার বেণীতে জড়ায়ে

অন্যমনে গেছে চলে গুন্‌গুন্‌ গানে।

আজি এ ঋতুর অবসানে

ছায়াঘন বীথি মোর নিস্তব্ধ নির্জন;

মৌমাছির মধু-আহরণ

হল সারা;

সমীরণ গন্ধহারা

তৃণে তৃণে ফেলিছে নিশ্বাস।

পাতার আড়াল ভরি একে একে পেতেছে প্রকাশ

অচঞ্চল ফলগুচ্ছ যত,

শাখা অবনত।

নিয়ে সাজি

কোথা তারা গেল আজি--

গোধূলি ছায়াতে হল লীন

যারা এসেছিল একদিন

কলরবে কান্না ও হাসিতে

দিতে আর নিতে।

আজি লয়ে মোর দানভার

ভরিয়াছি নিভৃত অন্তর আপনার--

অপ্রগল্‌ভ গূঢ় সার্থকতা

নাহি জানে কথা।

নিশীথ যেমন স্তব্ধ নিষুপ্ত ভুবনে

আপনার মনে

আপনার তারাগুলি

কোন্‌ বিরাটের পায়ে ধরিয়াছে তুলি

নাহি জানে আপনি সে--

সুদূর প্রভাত-পানে চাহিয়া রয়েছে নির্নিমেষে।