একাদশী রজনী

পোহায় ধীরে ধীরে--

রাঙা মেঘ দাঁড়ায়

উষারে ঘিরে ঘিরে।

ক্ষীণ চাঁদ নভের

আড়ালে যেতে চায়,

মাঝখানে দাঁড়ায়ে

কিনারা নাহি পায়।

বড়ো ম্লান হয়েছে

চাঁদের মুখখানি,

আপনাতে আপনি

মিশাবে অনুমানি।

হেরো দেখো কে ওই

এসেছে তার কাছে,

শুকতারা চাঁদের

মুখেতে চেয়ে আছে।

মরি মরি কে তুমি

একটুখানি প্রাণ,

কী না জানি এনেছ

করিতে ওরে দান।

চেয়ে দেখো আকাশে

আর তো কেহ নাই,

তারা যত গিয়েছে

যে যার নিজ ঠাঁই।

সাথীহারা চন্দ্রমা

হেরিছে চারি ধার,

শূন্য আহা নিশির

বাসর-ঘর তার!

শরতের প্রভাতে

বিমল মুখ নিয়ে

তুমি শুধু রয়েছে

শিয়রে দাঁড়াইয়ে।

ও হয়তো দেখিতে

পেলে না মুখ তোর!

ও হয়তো তারার

খেলার গান গায়,

ও হয়তো বিরাগে

উদাসী হতে চায়!

ও কেবল নিশির

হাসির অবশেষ!

ও কেবল অতীত

সুখের স্মৃতিলেশ!

দ্রুতপদে তাহারা

কোথায় চলে গেছে--

সাথে যেতে পারে নি

পিছনে পড় আছে!

কত দিন উঠেছ

নিশির শেষাশেষি,

দেখিয়াছ চাঁদেতে

তারাতে মেশামেশি!

দুই দণ্ড চাহিয়া

আবার চলে যেতে,

মুখখানি লুকাতে

উষার আঁচলেতে।

পুরবের একান্তে

একটু দিয়ে দেখা,

কী ভাবিয়া তখনি

ফিরিতে একা একা।

আজ তুমি দেখেছ

চাঁদের কেহ নাই,

স্নেহময়, আপনি

এসেছ তুমি তাই!

দেহখানি মিলায়

মিলায় বুঝি তার!

হাসিটুকু রহে না

রহে না বুঝি আর!

দুই দণ্ড পরে তো

রবে না কিছু হায়!

কোথা তুমি, কোথায়

চাঁদের ক্ষীণকায়!

কোলাহল তুলিয়া

গরবে আসে দিন,

দুটি ছোটো প্রাণের

লিখন হবে লীন।

সুখশ্রমে মলিন

চাঁদের একসনে

নবপ্রেম মিলাবে

কাহার রবে মনে!