এল সন্ধ্যা তিমির বিস্তারি;

দেবদারু সারি সারি

দোলে ক্ষণে ক্ষণে

ফাল্গুনের ক্ষুব্ধ সমীরণে।

স্তব্ধতার বক্ষোমাঝে পল্লবমর্মর

জাগায় অস্ফুট মন্ত্রস্বর।

মনে হয় অনাদি সৃষ্টির পরপারে

আপনি কে আপনারে

শুধাইছে ভাষাহীন প্রশ্ন নিরন্তর;

অসংখ্য নক্ষত্র নিরুত্তর।

অসীমের অদৃশ্য গুহায় কোন্‌খানে

নিরুদ্দেশ-পানে

লক্ষ্যহীন কালস্রোত চলে।

আমি মগ্ন হয়ে আছি সুগভীর নৈঃশব্দ্যের তলে।

ভাবি মনে মনে,

এতদিন সঙ্গ যারা দিয়েছিল আমার জীবনে

নিল তারা কতটুকু স্থান?

আমার গভীরতম প্রাণ,

আমার সুদূরতম আশা-আকাঙক্ষার

গোপন ধ্যানের অধিকার,

ব্যর্থ ও সার্থক কামনায়

আলোয় ছায়ায়

রচিলাম যে স্বপ্নভুবন,

যে আমার লীলানিকেতন

এক প্রান্ত ব্যাপ্ত আর অসমাপ্ত অরূপসাধনে

অন্য প্রান্ত কর্মের বাঁধনে,

যে অভাবনীয়,

অলক্ষিত উৎস হতে যে অমিয়

জীবনের ভোজে

চেতনারে ভরেছে সহজে,

যে ভালোবাসার ব্যথা রহি রহি

আনিয়া দিয়েছে বহি

শ্রুত বা অশ্রুত সুর উৎকণ্ঠিত চিতে

গীতে বা অগীতে--

কতটুকু তাহাদের জানা আছে

এল যারা কাছে!

ব্যক্ত অব্যক্তের সৃষ্টি এ মোর সংসারে

আসে যায় এক ধারে,

বিরহদিগন্তে পায় লয়--

নিয়ে যায় লেশমাত্র পরিচয়।

আপনার মাঝে এই বহুব্যাপী অজানারে ঢাকি

স্তব্ধ আমি রয়েছি একাকী।

যেন ছায়াঘন বট

জুড়ে আছে জনশূন্য নদীতট--

কোণে কোণে প্রশাখার কোলে কোলে

পাখি কভু বাসা বাঁধে, বাসা ফেলে কভু যায় চলে।

সম্মুখে স্রোতের ধারা আসে আর যায়

জোয়ার-ভাঁটায়;

অসংখ্য শাখার জালে নিবিড় পল্লবপুঞ্জ-মাঝে

রাত্রিদিন অকারণে অন্তহীন প্রতীক্ষা বিরাজে।