এসো আজি সখা বিজন পুলিনে

বলিব মনের কথা;

মরমের তলে যা-কিছু রয়েছে

লুকানো মরম-ব্যথা।

সুচারু রজনী, মেঘের আঁচল

চাপিয়া অধরে হাসিছে শশি,

বিমল জোছনা সলিলে মজিয়া

আঁধার মুছিয়া ফেলেছে নিশি,

কুসুম কাননে বিনত আননে

মুচকিয়া হাসে গোলাপবালা,

বিষাদে মলিনা, শরমে নিলীনা,

সলিলে দুলিছে কমলিনী বধূ

ম্লানরূপে করি সরসী আলা!

আজি, খুলিয়া ফেলিব প্রাণ

আজি, গাইব কত গান,

আজি, নীরব নিশীথে,চাঁদের হাসিতে

মিশাব অফুট তান!

দুই হৃদয়ের যত আছে গান

এক সাথে আজি গাইব,

দুই হৃদয়ের যত আছে কথা

দুইজনে আজি কহিব;

কতদিন সখা, এমন নিশীথে

এমন পুলিনে বসি,

মানসের গীত গাহিয়া গাহিয়া

কাটাতে পাই নি নিশি!

স্বপনের মতো সেই ছেলেবেলা

সেইদিন সথা মনে কি হয়?

হৃদয় ছিল গো কবিতা মাখানো

প্রকৃতি আছিল কবিতাময়,

কী সুখে কাটিত পূরণিমা রাত

এই নদীতীরে আসি,

[কু]সুমের মালা গাঁথিয়া গাঁথিয়া

গনিয়া তারকারাশি।

যমুনা সুমুখে যাইত বহিয়া

সে যে কী সুখের গাইত গান,

ঘুম ঘুম আঁখি আসিত মুদিয়া

বিভল হইয়া যাইত প্রাণ!

[কত] যে সুখের কল্পনা আহা

আঁকিতাম মনে মনে

[সা] রাটি জীবন কাটাইব যেন

...

তখন কি সখা জানিতাম মনে

পৃথিবী কবির নহে

কল্পনা আর যতই প্রবল

ততই সে দুখ সহে!

এমন পৃথিবী, শোভার আকর

পাখি হেথা করে গান

কাননে কাননে কুসুম ফুটিয়া

পরিমল করে দান!

আকাশে হেথায় উঠে গো তারকা

উঠে সুধাকর, রবি,

বরন বরন জলদ দেখিছে

নদীজলে মুখছবি,

এমন পৃথিবী এও কারাগার

কবির মনের কাছে!

যে দিকে নয়ন ফিরাইতে যায়

সীমায় আটক আছে!

তাই [যে] গো সখা মনে মনে আমি

গড়েছি একটি বন,

সারাদিন সেথা ফুটে আছে ফুল,

গাইছে বিহগগণ!

আপনার ভাবে হইয়া পাগল

রাতদিন সুখে আছি গো সেথা

বিজন কাননে পাখির মতন

বিজনে গাইয়া মনের ব্যথা!

কতদিন পরে পেয়েছি তোমারে,

ভুলেছি মরমজ্বালা;

দুজনে মিলিয়া সুখের কাননে

গাঁথিব কুসুমমালা!

দুজনে মিলিয়া পূরণিমা রাতে

গাইব সুখের গান

যমুনা পুলিনে করিব দুজনে

সুখ নিশা অবসান,

আমার এ মন সঁপিয়া তোমারে

লইব তোমার মন

হৃদয়ের খেলা খেলিয়া খেলিয়া

কাটাইব সারাক্ষণ!

এইরূপে সখা কবিতার কোলে

পোহায়ে যাইবে প্রাণ

সুখের স্বপন দেখিয়া দেখিয়া

গাহিয়া সুখের গান।