রামচন্দ্র, মন্ত্রী, দেওয়ান, রমাই ও অন্যান্য সভাসদগণ
রামচন্দ্র গদির উপর তাকিয়া হেলান দিয়া গুড়গুড়ি টানিতে টানিতে
সম্মুখস্থ একজন অপরাধীর বিচার করিতেছেন
চন্দ্রদীপ। রাজা রামচন্দ্রের কক্ষ
রামচন্দ্র, মন্ত্রী, দেওয়ান, রমাই ও অন্যান্য সভাসদগণ
রামচন্দ্র গদির উপর তাকিয়া হেলান দিয়া গুড়গুড়ি টানিতে টানিতে
সম্মুখস্থ একজন অপরাধীর বিচার করিতেছেন
রামচন্দ্র।
বেটা,তোর এতবড়ো যোগ্যতা!
অপরাধী।
(সরোদনে) দোহাই মহারাজ, আমি এমন কাজ করি নি।
মন্ত্রী।
বেটা প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে আর আমাদের মহারাজের তুলনা?
দেওয়ান।
বেটা, জানিস নে, যখন প্রতাপাদিত্যের বাপ প্রথম রাজা হয় তখন তাকে রাজটিকা পরাবার জন্যে সে আমাদের মহারাজার স্বর্গীয় পিতামহের কাছে আবেদন করে। অনেক কাঁদাকাটা করাতে তিনি তাঁর বাঁ-পায়ের কড়ে আঙুল দিয়ে তাকে টিকা পরিয়ে দেন।
রমাই।
বিক্রমাদিত্যের বেটা প্রতাপাদিত্য, ওরা তো দুই পুরুষে রাজা। প্রতাপাদিত্যের পিতামহ ছিল কেঁচো, কেঁচোর পুত্র হল জোঁক, বেটা প্রজার রক্ত খেয়ে খেয়ে বিষম ফুলে উঠল, সেই জোঁকের পুত্র আজ মাথা খুঁড়ে খুঁড়ে মাথাটা কুলোপানা করে তুলেছে আর চক্র ধরতে শিখেছে। আমরা পুরুষানুক্রমে রাজসভায় ভাঁড়বৃত্তি করে আসছি; আমরা বেদে, আমরা জাতসাপ চিনি নে?
রামচন্দ্র।
আচ্ছা, যা-- এ-যাত্রা বেঁচে গেলি, ভবিষ্যতে সাবধান থাকিস।
[ মন্ত্রী, রমাই ও রামচন্দ্র ব্যতীত সকলের প্রস্থান
[ মন্ত্রী, রমাই ও রামচন্দ্র ব্যতীত সকলের প্রস্থান
রমাই।
আপনি তো চলে এলেন, এ দিকে যুবরাজ বাবাজি বিষম গোলে পড়লেন। রাজার অভিপ্রায় ছিল, কন্যাটি বিধবা হলে হাতের লোহা আর বালা দুগাছি বিক্রি করে রাজকোষে কিঞ্চিৎ অর্থাগম হয়। যুবরাজ তাতে ব্যাঘাত করলেন। তা নিয়ে তম্বি কত।
রামচন্দ্র।
(হাসিতে হাসিতে) বটে?
মন্ত্রী।
মহারাজ, শুনতে পাই, প্রতাপাদিত্য আজকাল আপসোসে সারা হচ্ছেন। এখন কী উপায়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাবেন, তাই ভেবে তাঁর আহারনিদ্রা নেই।
রামচন্দ্র।
সত্যি নাকি ? [ হাস্য ও তাম্রকূট সেবন ]
মন্ত্রী।
আমি বললুম, আর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে কাজ নেই। তোমাদের ঘরে মহারাজ বিবাহ করেছেন, এতেই তোমাদের সাত পুরুষ উদ্ধার হয়ে গেছে। তার পরে আবার তোমাদের মেয়েকে ঘরে এনে ঘর নিচু করা, এত পুণ্য এখনও তোমরা কর নি। কেমন হে, ঠাকুর?
রমাই।
তার সন্দেহ আছে। মহারাজ, আপনি যে পাঁকে পা দিয়েছেন, সে তো পাঁকের বাবার ভাগ্যি, কিন্তু তাই বলে ঘরে ঢোকবার সময় পা ধুয়ে আসবেন না তো কী।
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্যের প্রবেশ
[ রমাই ও মন্ত্রীর প্রস্থান
[ রমাই ও মন্ত্রীর প্রস্থান
রামমোহন মালের প্রবেশ
রামমোহন মালের প্রবেশ
রামমোহন।
(করজোড়ে) মহারাজ।
রামচন্দ্র।
কী রামমোহন?
রামমোহন।
মহারাজ, আজ্ঞা দিন আমি মাঠাকরুনকে আনতে যাই।
রামচন্দ্র।
সে কি কথা!
রামমোহন।
আজ্ঞে হাঁ। অন্তঃপুর অন্ধকার হয়ে আছে, আমি তা দেখতে পারি নে। অন্দরে যাই, মহারাজের ঘরে কাকেও দেখতে পাই নে, আমার যেন প্রাণ কেমন করতে থাকে। আমার মা-লক্ষ্মী ঘরে এসে ঘর আলো করুন দেখে চক্ষু সার্থক করি।
রামচন্দ্র।
রামমোহন, তুমি পাগল হয়েছ? সে-মেয়েকে আমি ঘরে আনি?
রামমোহন।
(নেত্র বিস্ফারিত করিয়া) কেন মহারাজ!
রামচন্দ্র।
বল কী রামমোহন? প্রতাপাদিত্যের মেয়েকে আমি ঘরে আনব?
রামমোহন।
কেন আনবেন না হুজুর? আপনার রানীকে আপনি যদি ঘরে এনে তাঁর সম্মান না রাখেন তাহলে কি আপনার সম্মানই রক্ষা হবে?
রামচন্দ্র।
যদি প্রতাপাদিত্য মেয়েকে না দেয়?
রামমোহন।
(বক্ষ ফুলাইয়া) কী বললে মহারাজ? যদি না দেয়? এতবড়ো সাধ্য কার যে দেবে না? আমার মা জননী, আমাদের ঘরের মা-লক্ষ্মী, কার সাধ্য তাঁকে আমাদের কাছ হতে কেড়ে রাখতে পারে? আমার মাকে আমি আনব, তুমিই বা বারণ করবার কে?
[ প্রস্থানোদ্যম
[ প্রস্থানোদ্যম
রামচন্দ্র।
(তাড়াতাড়ি) রামমোহন, যেয়ো না, শোনো শোনো। আচ্ছা তুমি আনতে যাচ্ছ যাও-- তাতে আপত্তি নেই কিন্তু দেখো, এ-কথা যেন কেউ শুনতে না পায়। রমাই কিংবা মন্ত্রীর কানে একথা যেন কোনোমতে না ওঠে।
রামমোহন।
যে আজ্ঞা মহারাজ।