প্রতাপাদিত্যের কক্ষ

প্রতাপাদিত্য ও মন্ত্রী

প্রতাপাদিত্যের কক্ষ

প্রতাপাদিত্য ও মন্ত্রী

প্রতাপাদিত্য।

দৈবাৎ আগুন লাগার কথা আমি এক বর্ণ বিশ্বাস করি নে। এর মধ্যে চক্রান্ত আছে। খুড়ো কোথায়?

মন্ত্রী।

তাঁকে দেখা যাচ্ছে না।

প্রতাপাদিত্য।

হুঁ। তিনিই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে ছোঁড়াটাকে নিয়ে পালিয়েছেন।

মন্ত্রী।

তিনি সরল লোক-- এ-সকল বুদ্ধি তো তাঁর আসে না।

প্রতাপাদিত্য।

বাইরে থেকে যাকে সরল বলে বোধ না হবে তার কুটিল বুদ্ধি বৃথা।

মন্ত্রী।

কারাগার ভস্মসাৎ হয়ে গেছে, আমার আশঙ্কা হচ্ছে যদি--

প্রতাপাদিত্য।

কোনো আশঙ্কা নেই, আমি বলছি উদয়কে নিয়ে খুড়োমহারাজ পালিয়েছেন।

দ্বারীর প্রবেশ

দ্বারীর প্রবেশ

দ্বারী।

মহারাজ পত্র--

প্রতাপাদিত্য।

কার পত্র?

দ্বারী।

হুজুর, যুবরাজের হাতের লেখা।

প্রতাপাদিত্য।

কে এনেছে?

দ্বারী।

একজন নৌকার মাঝি।

প্রতাপাদিত্য।

সে কোথায় গেল?

দ্বারী।

সে পালিয়েছে।

[ প্রস্থান

[ প্রস্থান

প্রতাপাদিত্য।

(পত্র পাঠান্তে) এই দেখো মন্ত্রী, উদয় আমার কাছে মাপ চেয়েছে।

মন্ত্রী।

(করজোরে) তাঁকে মাপ করুন মহারাজ।

প্রতাপাদিত্য।

তাকে মাপ করব না তো কী! সে আমার দণ্ডেরও যোগ্য নয়। কিন্তু--মুক্তিয়ার খাঁ!

মুক্তিয়ার খাঁর প্রবেশ

মুক্তিয়ার খাঁর প্রবেশ

মুক্তিয়ার।

খোদাবন্দ্‌।

[ সেলাম

[ সেলাম

প্রতাপাদিত্য।

অশ্ব প্রস্তুত আছে-- তুমি এখনই যাও! কাল রাত্রে আছে বসন্ত রায়ের ছিন্ন মুণ্ড দেখতে চাই।

মুক্তিয়ার।

যো হুকুম মহারাজ!

[ প্রস্থান

[ প্রস্থান

প্রতাপাদিত্য।

সেই বৈরাগীটার খবর পেয়েছ?

মন্ত্রী।

না মহারাজ।

প্রতাপাদিত্য।

সে বোধ হয় পালিয়েছে। সে যদি থাকে তো আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ো।

মন্ত্রী।

কেন মহারাজ, তাঁকে আবার কিসের প্রয়োজন?

প্রতাপাদিত্য।

আর কিছু নয়-- সেই ভাঁড়টাকে নিয়ে একটু আমোদ করতে পারতুম-- তার কথা শুনতে মজা আছে।

ধনঞ্জয়ের প্রবেশ

ধনঞ্জয়ের প্রবেশ

ধনঞ্জয়।

জয় হোক মহারাজ। আপনি তো আমাকে ছাড়তেই চান না কিন্তু কোথা থেকে আগুন ছুটির পরোয়ানা নিয়ে হাজির। কিন্তু না বলে যাই কী করে! তাই হুকুম নিতে এলুম।

প্রতাপাদিত্য।

ক-দিন কাটল কেমন?

ধনঞ্জয়।

সুখে কেটেছে-- কোনো ভাবনা ছিল না। এ-সব তারই লুকোচুরি খেলা-- ভেবেছিল গারদে লুকোবে, ধরতে পারব না-- কিন্তু ধরেছি, চেপে ধরেছি, তার পরে খুব হাসি, খুব গান। বড়ো আনন্দ গেছে-- আমার গারদ-ভাইকে মনে থাকবে।

গান

(ওরে) শিকল, তোমায় কোলে করে

দিয়েছি ঝংকার।

(তুমি) আনন্দে ভাই রেখেছিলে

ভেঙে অহংকার।

তোমায় নিয়ে ক'রে খেলা

সুখে দুঃখে কাটল বেলা,

অঙ্গ বেড়ি দিলে বেড়ি

বিনা দামের অলংকার।

তোমার 'পরে করি নে রোষ,

দোষ থাকে তো আমারি দোষ,

ভয় যদি রয় আপন মনে

তোমায় দেখি ভয়ংকর।

অন্ধকারে সারা রাতি

ছিলে আমার সাথের সাথী,

সেই দয়াটি স্মরি তোমায়

করি নমস্কার।

প্রতাপাদিত্য।

বল কি বৈরাগী, গারদে তোমার এত আনন্দ কিসের?

ধনঞ্জয়।

মহারাজ, রাজ্যে তোমার যেমন আনন্দ তেমনি আনন্দ, অভাব কিসের? তোমাকে সুখ দিতে পারেন আর আমাকে পারেন না?

প্রতাপাদিত্য।

এখন তুমি যাবে কোথায়?

ধনঞ্জয়।

রাস্তায়।

প্রতাপাদিত্য।

বৈরাগী, আমার এক-এক বার মনে হয় তোমার ওই রাস্তাই ভালো-- আমার এই রাজ্যটা কিছু না।

ধনঞ্জয়।

মহারাজ, রাজ্যটাও তো রাস্তা। চলতে পারলেই হল! ওটাকে যে পথ বলে জানে সেই তো পথিক; আমরা কোথায় লাগি? তাহলে অনুমতি যদি হয় তো এবারকার মতো বেড়িয়ে পড়ি।

প্রতাপাদিত্য।

আচ্ছা, কিন্তু মাধবপুরে যেয়ো না ।

ধনঞ্জয়।

সে কেমন করে বলি! যখন নিয়ে যাবে তখন কার বাবার সাধ্য বলে যে যাব না?
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7