কেদার ও অবিনাশ
কেদার ।
ওর নাম কী, আজ তবে উঠি, অনেক বিরক্ত করা গেছে--
অবিনাশ।
বিলক্ষণ! বিরক্ত আবার কিসের! একটু বসে যাও-না! শোনো-না-- আমি চলে আসার পর সেদিন মনোরমা আমার কথা কিছু বললে?
কেদার ।
সে আবার কি বলবে! তোমার নাম করবামাত্র তার গাল, ওর নাম কী, বিলিতি বেগুনের মতো টকটক করে ওঠে!
অবিনাশ।
(হাসিতে হাসিতে) বল কী কেদার, এত লজ্জা!
কেদার।
কী বলে, ঐটেই তো হল খারাপ লক্ষণ!
অবিনাশ।
(ধাক্কা দিয়া) দূর ! কী বলিস তার ঠিক নেই! খারাপ লক্ষণটা কী হল শুনি!
কেদার।
ওর নাম কী, ওটা স্বভাবের নিয়ম। যেমন তীর ছোঁড়া--গোড়ায় পিছনের দিকে প্রাণপণে পড়ে টান, তার পরে, ওর নাম কী, ছাড়া পাবামাত্রই সামনের দিকে একেবারে বোঁ করে দেয় ছুট! গোড়ায় যেখানে বেশি লজ্জা দেখা যাচ্ছে, ওর নাম কী, ভালোবাসার দৌড়টাও সেখানে বড্ড বেশি হবে।
অবিনাশ।
বল কী কেদার! তা, কিরকম লজ্জাটা তার দেখলে, শুনিই না! তোমরা বুঝি আমার নাম করে তাকে ঠাট্টা করেছিলে ?
কেদার।
ভাই, সে অনেক কথা। আজ একটু কাজ আছে, আজ তবে--
অবিনাশ।
আঃ, বোসো-না কেদার ! শোনো না, একটা কথা আছে। বুঝেছ কেদার, একটা আংটি কেনা গেছে। বুঝেছ ?
কেদার।
খুব সহজ কথা, ওর নাম কী, বুঝেছি।
অবিনাশ।
সহজ ? আচ্ছা, কী বুঝেছ বলো দেখি।
কেদার।
টাকা থাকলে আংটি কেনা সহজ, ওর নাম কী, এই বুঝেছি।
অবিনাশ।
কিছু বোঝ নি। এই আংটিটি আমি তোমার হাত দিয়ে মনোরমাকে উপহার পাঠাতে চাই। তাতে কিছু দোষ আছে?
কেদার।
আমি তো কিছু দেখি নে। যদি বা থাকে তো দোষটুকু বাদ দিয়ে, ওর নাম কী, আংটিটুকু নিলেই হবে।
অবিনাশ।
আঃ তোমার ঠাট্টা রাখো। শোনো-না কেদার, ঐসঙ্গে একটা চিঠিও দিই-না?
কেদার।
সে আর বেশি কথা কী।
অবিনাশ।
তবে চট্ করে লিখে দিই।
[ লিখিতে প্রবৃত্ত
[ লিখিতে প্রবৃত্ত
কেদার।
আংটিটা তো লাভ করা গেল। কিন্তু দুই ভাইয়ের মাঝখানে পড়ে মেহন্নতটাও বড্ড বেশি হচ্ছে। এখন, বিবাহটা শীঘ্র চুকে গেলে একটু জিরোবার সময় পাওয়া যায়।
বৈকুন্ঠের প্রবেশ
বৈকুন্ঠের প্রবেশ
বৈকুণ্ঠ।
(উঁকি মারিয়া স্বগত) এই যে, ভায়া আমার কেদারবাবুকে নিয়ে পড়েছে! কনে দেখে ইস্তক ওঁকে আর এক মুহূর্ত ছাড়ে না। বাতিকগ্রস্ত মানুষ কিনা, সকল বিষয়েই বাড়াবাড়ি! কেদারবাবু বোধ হয় একেবারে অস্থির হয়ে উঠেছেন! বেচারাকে আমি উদ্ধার না করলে উপায় নেই। (ঘরে ঢুকিয়া) এই যে কেদারবাবু, আমার সেই নতুন পরিচ্ছেদটি শোনাবার জন্যে আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
কেদার।
(স্বগত) আর তো বাঁচি নে!
অবিনাশ।
(চিঠি ঢাকিয়া) দাদা, কেদারবাবুর সঙ্গে একটা কাজের কথা ছিল।
বৈকুণ্ঠ।
কাজের তো সীমা নেই! ছোঁড়াটার মাথা একেবারে ঘুরে গেছে।--কিন্তু কেদারবাবুকে না পেলে তো আমার চলছে না।
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য।
বাবু, মানিকতলা থেকে মালী এসেছে।
অবিনাশ।
এখন যেতে বলে দে!
[ ভৃত্যের প্রস্থান
[ ভৃত্যের প্রস্থান
বৈকুণ্ঠ।
যাও-না, একবার শুনেই এসো-না! ততক্ষণ আমি কেদারবাবুর কাছে আছি--
কেদার।
আমার জন্যে ব্যস্ত হবেন না, ওর নাম কী, আমি আজ তবে--
অবিনাশ।
না কেদার; একটু বোসো।
বৈকুণ্ঠ।
না, না, আপনি বসুন। দেখো অবিনাশ, গাছপালা সম্বন্ধে তোমার যে আলোচনাটা ছিল সেটা অবহেলা কোরো না। সেটা বড়ো স্বাস্থ্যকর, বড়োই আনন্দজনক।
অবিনাশ।
কিছু অবহেলা করব না দাদা, কিন্তু এখন একটা বড়ো দরকারি কাজ আছে।
বৈকুণ্ঠ।
আচ্ছা, তা হলে তোমরা একটু বোসো। ভালোমানুষ পেয়ে বেচারা কেদারবাবুকে ভারি মুশকিলে ফেলেছে--একটু বিবেচনা নেই--বয়সের ধর্ম!
তিনকড়ির প্রবেশ
তিনকড়ির প্রবেশ
কেদার।
আবার এখানে কী করতে এলি?
তিনকড়ি।
ভয় কী দাদা, দুজন আছে-- একটিকে তুমি নাও, একটি আমাকে দাও।
বৈকুণ্ঠ।
বেশ কথা বাবা, এসো, আমার ঘরে এসো।
কেদার।
তিনকড়ে, তুই আমাকে মাটি করলি।
তিনকড়ি।
সব্বাই বলে তুমিই আমাকে মাটি করেছ। (কাছে গিয়া) রাগ কর কেন দাদা, যে অবধি তোমাকে দেখেছি সেই অবধি আপন বাপ দাদা খুড়ো কাউকে দু চক্ষে দেখতে পারি নে। এত ভালোবাসা।
কেদার।
বাজে বকিস কেন, তোর আবার বাপ দাদা কোথা!
তিনকড়ি।
বললে বিশ্বাস করবি নে, কিন্তু আছে ভাই। ওতে তো খরচও নেই, মাহাত্মিও নেই--তিনকড়েরও বাপ দাদা থাকে, যদি আমার নিজে করে নিতে হত তবে কি আর থাকত? কক্খনো না!
বৈকুণ্ঠ।
হা হা হা হাঃ! ছেলেটি বেশ কথা কয়। চলো বাবা, আমার ঘরে চলো।
[ উভয়ের প্রস্থান
[ উভয়ের প্রস্থান
অবিনাশ।
খুব সংক্ষেপে লিখলুম, বুঝেছ কেদার-- কেবল একটি লাইন-- "দেবীপদতলে বিমুগ্ধ ভক্তের পূজোউপহার'।
কেদার।
তা, কোনো কথাটিই বাদ দেওয়া হয় নি-দিব্যি হয়েছে-তবে আজ উঠি।
অবিনাশ।
কিন্তু পদতলে কথাটা কি ঠিক খাটল-ওটা কিনা আংটি-
কেদার।
কী বলে ভালো, তা "করতলে'ই লিখে দাও-না !
অবিনাশ।
কিন্তু করতলে পূজোপহারটা কেমন শোনাচ্ছে!
কেদার।
তা, না হয় পূজোপহার নাই হল, ওর নাম কী-
অবিনাশ।
শুধু "উপহার' লিখলে বড়ো ফাঁকা শোনায়, "পূজোপহারই' থাক্-
কেদার।
তা থাক্-না-
অবিনাশ।
কিন্তু তা হলে "করতলে'টা কী করা যায়--
কেদার।
ওটা পদতলেই করে দাও-না--ওর নাম কী, তাতে ক্ষতি কী । আমি তা হলে উঠি।
অবিনাশ।
একটু রোসো-না। আংটি সম্বন্ধে পদতলে কথাটা খাপছাড়া শোনাচ্ছে।
কেদার।
খাপছাড়া কেন হবে! তুমি তো পদতলে দিয়ে খালাস, তার পরে ওর নাম কী, তিনি করতলে তুলে নেবেন, কী বলে, যদি স্বয়ং না নেন তো অন্য লোক আছে।
অবিনাশ।
আচ্ছা, পূজোপহার না লিখে যদি প্রণয়োপহার লেখা যায়।
কেদার।
সেটা যদি খুব চট করে লেখা যায় তো সেইটেই ভালো ।
অবিনাশ।
কিন্তু রোসো, একটু ভেবে দেখি।
ঈশানের প্রবেশ
ঈশানের প্রবেশ
ঈশান।
খাবার ঠাণ্ডা হয়ে এল যে।
অবিনাশ।
আচ্ছা, সে হবে এখন, তুই যা।
ঈশান।
দিদিঠাকরুন বসে আছে--
অবিনাশ।
আচ্ছা আচ্ছা, তুই এখন পালা--
ঈশান।
(কেদারের প্রতি) বড়োবাবুর তো আহারনিদ্রা বন্ধ, আবার ছোটবাবুকেও খেপিয়ে তুলেছ?
কেদার।
ভাই ঈশেন, যদিচ আমার নিমক খাও না, তবু, ওর নাম কী, আমার কথাটাও একবার ভেবে দেখো। তোমার বড়োবাবু খুব বিস্তারিত করে লিখে থাকেন আর তোমার ছোটবাবু, কী বলে, অত্যন্ত সংক্ষেপেই লেখেন, কিন্তু আমার কপালক্রমে দুইই সমান হয়ে ওঠে--অবিনাশ, তোমার খাবার এসেছে, ওর নাম কী, আমি উঠি।
অবিনাশ।
বিলক্ষণ! তুমিও খেয়ে যাও। ঈশেন, বাবুর জন্যে খাবার ঠিক করো।
ঈশান।
সময়মত বল না, এখন আমি খাবার ঠিক করি কোত্থেকে?
অবিনাশ।
তোর মাথা থেকে! বেটা ভূত!
ঈশান।
এও যে ঠিক বড়োবাবুর মতো হয়ে এল, আমাকে আর টিকতে দিলে না।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
অবিনাশ।
এখানে "প্রণয়োপহার' লিখলে "দেবী' কথাটা বদলাতে হয়। দেবীর সঙ্গে প্রণয় হবে কী করে।
কেদার।
কেন হবে না! তা হলে দেবতাগুলো, ওর নাম কী, বাঁচে কী করে? ভাই অবিনাশ, স্ত্রীজাতি স্বর্গে মর্ত্যে পাতালে যেখানেই থাকুক, ওর নাম কী, তাদের সঙ্গে প্রণয় হতে পারে, কী বলে ভালো, হয়েও থাকে। তুমি অত ভেবো না! (স্বগত) এখন ছাড়লে বাঁচি।
তিনকড়ির প্রবেশ
তিনকড়ির প্রবেশ
তিনকড়ি।
ও দাদা! তোমার বদল ভেঙে নাও! তুমি সেখানে যাও, আমি বরঞ্চ এখানে একবার চেষ্টা দেখি।
কেদার।
কেন রে, কী হয়েছে?
তিনকড়ি।
ওরে বাস রে! #স কী খাতা! আমি তার মধ্যে সেঁধোলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না! সেইটে পড়তে দিয়ে বুড়ো কোথায় উঠে গেল, আমি তো এক দৌড়ে পালিয়ে এসেছি।
বৈকুণ্ঠের প্রবেশ
বৈকুণ্ঠের প্রবেশ
বৈকুণ্ঠ।
কী তিনকড়ি, পালিয়ে এলে যে!
তিনকড়ি।
আপনি অতবড়ো একখানা বই লিখলেন আর এইটুকু বুঝলেন না!
বৈকুণ্ঠ।
কেদারবাবু, যদি আপনি একবার আসেন তা হলে--
কেদার।
চলুন। (স্বগত) রামে মারলেও মরব রাবণে মারলেও মরব, কিন্তু অবিনাশের ঐ একটি লাইন নিয়ে তো আর পারি নে!
অবিনাশ।
কেদার, তুমি যাও কোথায়! দাদা, আমার সেই কাজটা--
বৈকুণ্ঠ।
(রাগিয়া উঠিয়া) দিনরাত্তির তোমার কাজ! কেদারবাবু ভদ্রলোক, ওঁকে একটু বিশ্রাম দেবে না! তোমাদের একটু বিবেচনা নেই! আসুন কেদারবাবু।
কেদার।
ওর নাম কী, চলুন।
[ উভয়ের প্রস্থান
[ উভয়ের প্রস্থান
অবিনাশ।
মনোরমা তোমার কে হন তিনকড়ি?
তিনকড়ি।
তিনি আমার দূরসম্পর্কে বোন হন, কিন্তু সে পরিচয় প্রকাশ হলে তিনি ভারি লজ্জা পাবেন।
অবিনাশ।
তাঁর খুব লজ্জা, না তিনকড়ি?
তিনকড়ি।
আমার সম্বন্ধে ভারি লজ্জা। কাউকে মুখ দেখাবার জো নেই।
অবিনাশ।
না, তোমার সম্বন্ধে বলছি নে, আমার সম্বন্ধে। জান তো তিনকড়ি, আমার সঙ্গে তাঁর একটা সম্বন্ধ--
তিনকড়ি।
ওঃ, বুঝেছি। তা তো হতেই পারে। আমার সঙ্গেও একটি কন্যের সম্বন্ধ হয়েছিল--বিবাহের পূর্বে সে তো লজ্জায় মরেই গেল।
অবিনাশ।
আঃ, কী বল তিনকড়ি!
তিনকড়ি।
শুধু লজ্জা নয়, শুনলুম তার যকৃৎও ছিল।
অবিনাশ।
মনোরমার--
তিনকড়ি।
যকৃতের দোষ নেই।
অবিনাশ।
আঃ, সে কথা আমি জিজ্ঞাসা করছি নে, আমি হৃদয়ের কথা বলছি--
তিনকড়ি।
মশায়, ও-সব বড়ো শক্ত শক্ত কথা, আমি বুঝি নে। মেয়েমানুষের হৃদয় তিনকড়ি কখনো পায় নি, কখনো প্রত্যাশাও করে নি। দিব্যি আছি।
অবিনাশ।
আচ্ছা, সে থাক্--কিন্তু, দেখো তিনকড়ি, মনোরমাকে আমি একটি আংটি উপহার দেব। বুঝলে? সেইসঙ্গে এক লাইন চিঠি দিতে চাই--
তিনকড়ি।
ক্ষতি কী! একটা লাইন বৈ তো নয়, চট করে হয়ে যাবে।
অবিনাশ।
এই দেখো-না, আমি লিখেছিলুম-- "দেবীপদতলে বিমুগ্ধ ভক্তের পূজোপহার'। তুমি কী বল?
তিনকড়ি।
তোমার কথা তুমি বলবে, ওর মধ্যে আমার কিছু বলা ভালো হয় না, সে হল আমার ভগ্নী--
অবিনাশ।
না না, তা বলছি নে। আংটি কি ঠিক পদতলে দেওয়া যায়! করতলে লিখলে--
তিনকড়ি।
তা, ওটা লেখা বৈ তো না--পদতলে লিখে করতলে দিলেই হবে, সেজন্যে তো কেউ আদালতে নালিশ করবে না।
অবিনাশ।
না হে না, লেখার তো একটা মানে থাকা চাই--
তিনকড়ি।
আংটি থাকলে আর মানে থাকার দরকার কী? ওতেই তো বোঝা গেল।
অবিনাশ।
আংটির চেয়ে কথার দাম বেশি, তা জান?
তিনকড়ি।
তা হলে আজ আর তিনকড়েকে হাহাকার করে বেড়াতে হত না।
অবিনাশ।
আঃ, কী বকছ তুমি তার ঠিক নেই। একটু মন দিয়ে শোনো দেখি। ও লাইনটা যদি এইরকম লেখা যায় তো কেমন হয়-- "প্রেয়সীর করপদ্মে অনুরক্ত সেবকের প্রণয়োপহার'।
তিনকড়ি।
বেশ হয়।
অবিনাশ।
বেশ হয়! একটা কথা বলে দিলেই হল-- "বেশ হয়'! একটু ভেবেচিন্তে বলো-না!
তিনকড়ি।
ও বাবা! এ যে আবার রাগ করে! বুড়োর শরীরে কিন্তু রাগ নেই। (প্রকাশ্যে) তা, ভেবেচিন্তে দেখলে বোধ হয় গোড়ারটাই ছিল ভালো।
অবিনাশ।
কেন বলো দেখি। এটাতে কী দোষ হয়েছে।
তিনকড়ি।
ও বাবা। এটাতে যদি দোষ না থাকবে তো খামকা আমাকে ভাবতে বললে কেন? এ তো বড়ো মুশকিলেই পড়া গেল দেখছি।--দোষ কী জানেন অবিনাশবাবু,ও ভাবতে গেলেই দোষ, না ভাবলে কিছুতেই দোষ নেই, আমি তো এই বুঝি।
অবিনাশ।
ওঃ, বুঝেছি--তুমি বলছ, আগে থাকতে ঐ প্রেয়সী সম্বোধনটায় লোকে কিছু মনে ভাবতে পারে--
তিনকড়ি।
বাঁচা গেল!--হাঁ, তাই বটে। কিন্তু কী জানেন, আপনা-আপনির মধ্যে নাহয় তাকে প্রেয়সীই বললেন! তা কি আর অন্য কেউ বলে না! ওইটেই লিখে ফেলুন।
অবিনাশ।
কাজ নেই, গোড়ায় যেটা ছিল সেইটেই--
তিনকড়ি।
সেইটেই তো আমার পছন্দ--
অবিনাশ।
কিন্তু একটু ভেবে দেখো-না, ওটা যেন--
তিনকড়ি।
ও বাবা! আবার ভাবতে বলে! দেখো অবিনাশবাবু, শিশুকাল থেকে আমিও কারোও জন্যে ভাবি নি, আমার জন্যেও কেউ ভাবে নি, ওটা আমার আর অভ্যাস হলই না। এরকম আরো আমার অনেকগুলি শিক্ষার দোষ আছে--
অবিনাশ।
আঃ, তিনকড়ি, তুমি একটু থামলে বাঁচি। নিজের কথা নিয়েই কেবল বকবক করে মরছ, আমাকে একটু ভাবতে দাও দেখি।
তিনকড়ি।
আপনি ভাবুন না। আমাকে ভাবতে বলেন কেন? একটু বসুন অবিনাশবাবু, আমি কেদারদাকে ডেকে আনি। সে আমার চেয়ে ভাবতেও জানে, ভেবে কিনারা করতেও পারে।-- আমার পক্ষে বুড়োই ভালো।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
কেদার বৈকুণ্ঠ ও তিনকড়ির প্রবেশ
কেদার বৈকুণ্ঠ ও তিনকড়ির প্রবেশ
বৈকুণ্ঠ।
অবিনাশ, কেদারবাবুকে আবার তোমার কী দরকার হল। আমি ওঁকে আমার নূতন পরিচ্ছেদটা শোনাচ্ছিলুম--তিনকড়ি কিছুতেই ছাড়লে না, শেষকালে হাতে পায়ে ধরতে লাগল।
অবিনাশ।
আমার সেই কাজটা শেষ হয় নি, তাই।
বৈকুণ্ঠ।
(রাগিয়া) তোমার তো কাজ শেষ হয় নি, আমারই সে পরিচ্ছেদটা শেষ হয়েছিল না কি?
অবিনাশ।
তা, দাদা, ওঁকে নিয়ে যাও-না--
কেদার।
(ব্যস্ত হইয়া) ওর নাম কী, অবিনাশ,তোমারও সে কাজটা তো জরুরি, কী বলে, আর তো দেরি করা চলে না।
বৈকুণ্ঠ।
বিলক্ষণ! আপনি, সেজন্যে ভাববেন না। --নিজের কাজ নিয়ে কেদারবাবুকে এরকম কষ্ট দেওয়া উচিত হয় না অবিনাশ। অমন করলে উনি আর এখানে আসবেন না।
তিনকড়ি।
সে ভয় করবেন না বৈকুণ্ঠবাবু--আমাদের দুটিকে না চাইলেও পাওয়া যায়, তাড়ালেও ফিরে পাবেন--মলেও ফিরে আসব এমনি সকলে সন্দেহ করে।
কেদার।
তিনকড়ে! ফের!
তিনকড়ি।
ভাই, আগে থাকতে বলে রাখাই ভালো--শেষকালে ওঁয়ারা কী মনে করবেন।
ঈশানের প্রবেশ
ঈশানের প্রবেশ
ঈশান।
(অবিনাশ ও কেদারের প্রতি) বাবু, তোমাদের দুজনেরই খাবার জায়গা হয়েছে।
তিনকড়ি।
আর আমাকে বুঝি ফাঁকি!--জন্মাবামাত্র যার নিজের মা ফাঁকি দিয়ে ম'ল, বন্ধুরা তার আর কী করবে!-- কিন্তু দাদা, তিনকড়ে তোমাকে ভাগ না দিয়ে খায় না।
কেদার।
তিনকড়ে! ফের!
তিনকড়ি।
তা, যা ভাই, চট করে খেয়ে আয় গে। দেরি করলে বড্ড লোভ হবে। মনে হবে ছত্রিশ ব্যঞ্জন লুঠছিস।
বৈকুণ্ঠ।
সে কী কথা তিনকড়ি! তুমি না খেয়ে যাবে! সে কি হয়! ঈশেন!
ঈশান।
আমি জানি নে। আমি চললুম।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
অবিনাশ ।
চলো-না তিনকড়ি। একরকম করে হয়ে যাবে।
তিনকড়ি।
টানাটানি করে দরকার কী। আপনারা এগোন। খাওয়াবার রাস্তা বৈকুণ্ঠবাবু জানেন-- সেদিন টের পেয়েছি।
[ তিনকড়ি ও বৈকুণ্ঠের প্রস্থান
[ তিনকড়ি ও বৈকুণ্ঠের প্রস্থান
অবিনাশ।
তা হলে ও লাইনটা--
কেদার।
ওর নাম কী, খেয়ে এসে হবে।











