অনিল ও কবি

অনিল ও কবি

অনিল।

একবার এস তুমি, চল গো হোথায়--

দেখে যাও কি হৃদয় দোলেছ দু-পায়!

যখন কোরক সবে, খোলে নাই আঁখি,

তখন হৃদয়ে তার বসিয়া একাকী

দিনরাত-- দিনরাত বিষদন্ত বিঁধি

আহা সেই সুকুমার কিশলয়হৃদি

বিন্দু বিন্দু রক্ত তার করেছ শোষণ!

কথাটি সে বলে নাই-- মুখটি সে তুলে নাই,

হৃদয়ঘাতীরে হৃদে দিয়েছে আসন!

আজ সে যৌবনে যবে খুলিল নয়ন--

দেখিল হৃদয়ে তার নাই রক্তলেশ,

যৌবনের পরিমল হয়েছে নিঃশেষ!

কথাটি সে বলিল না-- মুখটি সে তুলিল না,

দুর্ব্বল মাথাটি আহা পড়িল গো নুয়ে--

মাটিতে মিশাবে কবে, চেয়ে আছে ভুয়ে!

এস তবে বিষকীট, দেখ'সে আসিয়া--

হলাহলময় হাসি মরিও হাসিয়া--

একটু একটু করি কি করে যেতেছে মরি,

একটি একটি দল পড়িছে খসিয়া!

বিষাক্ত নিশ্বাসে তব বিষাক্ত চুম্বনে

কি রোগ পশিল তার সুকোমল মনে?

তার চেয়ে কেন তীব্র অশনি আসিয়া

দারুণ চুম্বনে তারে ফেলে নি নাশিয়া!

দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে জ্বরি জ্বরি হলাহলে

মর্ম্মে মর্ম্মে শিরে শিরে হ'ত না দহিতে,

মনের ব্যথার 'পরে দংশন সহিতে!

মুহূর্ত্তের আলিঙ্গনে মরিত, ফুরাত--

মুহূর্ত্ত জ্বলিয়া শেষে সকল জুড়াত।

যে কৌশলে ধীরে ধীরে হৃদয়ে শিরে শিরে

দারুণ মৃত্যুর রস করেছ সঞ্চার,

সে কৌশল সফল যে হয়েছে তোমার!

তাই একবার এস-- দেখ'সে ত্বরায়

কেমন করিয়া তার জীবন ফুরায়!

নিদারুণ বিষ তব ফলে কি করিয়া,

জ্বরিয়া মরিতে হ'লে মরে কি করিয়া!

সে বালা, আসন্ন তার দেখিয়া মরণ,

কাঁদিয়া তোমারি কাছে করেছে প্রেরণ!

এখনো চাও গো যদি, শেষ রক্তে তার

দিবে গো সে প্রক্ষালিয়া চরণ তোমার।

নিতান্ত দুর্ব্বল বুকে করিবে ধারণ

ওই তব নিরদয় কঠিন চরণ!

রক্তময় পদতলে বুক ফাটি গিয়া

নিতান্ত মরিবে বালা কথা না কহিয়া!

তবে এস, তার কাছে এস একবার--

আরম্ভ করিলে যাহা শেষ দেখ তার!
1...27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35