প্রমদার সখীগণ
কানন
প্রমদার সখীগণ
প্রথমা।
সখী, সে গেল কোথায়,
তারে ডেকে নিয়ে আয়।
সকলে।
দাঁড়াব ঘিরে তারে তরুতলায়।
প্রথমা।
আজি এ মধুর সাঁঝে, কাননে ফুলের মাঝে,
হেসে হেসে বেড়াবে সে, দেখিব তায়।
দ্বিতীয়া।
আকাশের তারা ফুটেছে, দখিনে বাতাস ছুটেছে,
পাখিটি ঘুমঘোরে গেয়ে উঠেছে।
প্রথমা।
আয় লো আনন্দময়ী, মধুর বসন্ত লয়ে,
সকলে।
লাবণ্য ফুটাবি লো তরুতলায়!
প্রমদার প্রবেশ
প্রমদার প্রবেশ
প্রমদা।
দে লো সখী দে পরাইয়ে গলে,
সাধের বকুলফুলহার।
আধফোটা জুঁইগুলি যতনে আনিয়া তুলি,
গাঁথি গাঁথি সাজায়ে দে মোরে
কবরী ভরিয়ে ফুলভার।
তুলে দে লো চঞ্চল কুন্তল
কপোলে পড়িছে বারেবার।
প্রথমা।
আজি এত শোভা কেন, আনন্দে বিবশা যেন।
দ্বিতীয়া।
বিম্বাধরে হাসি নাহি ধরে,
লাবণ্য ঝরিয়া পড়ে ধরাতলে!
প্রথমা।
সখী, তোরা দেখে যা, দেখে যা,
তরুণ তনু,এত রূপরাশি
বহিতে পারে না বুঝি আর!
তৃতীয়া।
সখী, বহে গেল বেলা, শুধু হাসিখেলা,
এ কি আর ভালো লাগে!
আকুল তিয়াষ, প্রেমের পিয়াস,
প্রাণে কেন নাহি জাগে!
কবে আর হবে থাকিতে জীবন
আঁখিতে আঁখিতে মদির মিলন,
মধুর হুতাশে মধুর দহন,
নিত-নব অনুরাগে।
তরল কোমল নয়নের জল
নয়নে উঠিবে ভাসি।
সে বিষাদ-নীরে নিবে যাবে ধীরে
প্রখর চপল হাসি।
উদাস নিশ্বাস আকুলি উঠিবে,
আশা-নিরাশায় পরান টুটিবে,
মরমের আলো কপোলে ফুটিবে,
শরম-অরুণ-রাগে।
প্রমদা।
ওলো রেখে দে, সখী, রেখে দে,
মিছে কথা ভালোবাসা।
সুখের বেদনা, সোহাগ যাতনা,
বুঝিতে পারি না ভাষা।
ফুলের বাঁধন, সাধের কাঁদন,
পরান সঁপিতে প্রাণের সাধন,
লহো লহো বলে পরে আরাধন
পরের চরণে আশা।
তিলেক দরশ পরশ মাগিয়া,
বরষ বরষ কাতরে জাগিয়া,
পরের মুখের হাসির লাগিয়া
অশ্রু-সাগরে ভাসা।
জীবনের সুখ খুঁজিবারে গিয়া
জীবনের সুখ নাশা।
মায়াকুমারীগণ।
প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে,
কে কোথা ধরা পড়ে, কে জানে।
গরব সব হায় কখন টুটে যায়,
সলিল বহে যায় নয়নে।
কুমারের প্রবেশ
কুমারের প্রবেশ
কুমার।
(প্রমদার প্রতি) যেয়ো না, যেয়ো না ফিরে,
দাঁড়াও, বারেক দাঁড়াও হৃদয়-আসনে।
চঞ্চল সমীর সম ফিরিছ কেন,
কুসুমে কুসুমে, কাননে কাননে।
তোমায় ধরিতে চাহি, ধরিতে পারি নে,
তুমি গঠিত যেন স্বপনে,
এস হে, তোমারে বারেক দেখি ভরিয়ে আঁখি,
ধরিয়া রাখি যতনে।
প্রাণের মাঝে তোমারে ঢাকিব,
ফুলের পাশে বাঁধিয়ে রাখিব,
তুমি দিবস-নিশি রহিবে মিশি
কোমল প্রেম-শয়নে।
প্রমদা।
কে ডাকে! আমি কভু ফিরে নাহি চাই।
কত ফুল ফুটে উঠে, কত ফুল যায় টুটে,
আমি শুধু বহে চলে যাই।
পরশ পুলক-রস ভরা রেখে যাই, নাহি দিই ধরা।
উড়ে আসে ফুলবাস, লতাপাতা ফেলে শ্বাস,
বনে বনে উঠে হা-হুতাশ,
চকিতে শুনিতে শুধু পাই,
চলে যাই।
আমি কভু ফিরে নাহি চাই।
অশোকের প্রবেশ
অশোকের প্রবেশ
অশোক।
এসেছি গো এসেছি, মন দিতে এসেছি,
যারে ভালো বেসেছি!
ফুলদলে ঢাকি মন যাব রাখি চরণে,
পাছে কঠিন ধরণী পায়ে বাজে,
রেখো রেখো চরণ হৃদি-মাঝে,
না হয় দলে যাবে, প্রাণ ব্যথা পাবে,
আমি তো ভেসেছি, অকূলে ভেসেছি।
প্রমদা।
ওকে বলো, সখী বলো, কেন মিছে করে ছল,
মিছে হাসি কেন, সখী, মিছে আঁখিজল!
জানি নে প্রেমের ধারা, ভয়ে তাই হই সারা,
কে জানে কোথায় সুধা কোথা হলাহল।
সখীগণ।
কাঁদিতে জানে না এরা, কাঁদাইতে জানে কল,
মুখের বচন শুনে মিছে কী হইবে ফল।
প্রেম নিয়ে শুধু খেলা প্রাণ নিয়ে হেলাফেলা,
ফিরে যাই এই বেলা, চল, সখী, চল।
[ প্রস্থান
[ প্রস্থান
মায়াকুমারীগণ।
প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে,
কে কোথা ধরা পড়ে, কে জানে।
গরব সব হায় কখন টুটে যায়,
সলিল বহে যায় নয়নে।
এ সুখ-ধরণীতে, কেবলি চাহ নিতে,
জান না হবে দিতে আপনা,
সুখের ছায়া ফেলি, কখন যাবে চলি,
বরিবে সাধ করি বেদনা।
কখন বাজে বাঁশি, গরব যায় ভাসি,
পরান পড়ে আসি বাঁধনে।