আদিত্য ও সরলা
সরলা।
কেন এলে? ভালো করো নি? ফিরে যাও। আমার সঙ্গে তোমাকে এমন করে দেব না জড়াতে।
আদিত্য।
তুমি দেবে কি না সে তো কথা নয়, জড়িয়ে যে গেছেই। সেটা ভালো হোক বা মন্দ হোক, তাতে আমাদের হাত নেই।
সরলা।
সে-সব কথা পরে হবে, ফিরে যাও, রোগীকে শান্ত করো গে।
আদিত্য।
আমাদের এই বাগানের আর-একটা শাখা বাড়াব সেই কথাটা--
সরলা।
আজ থাক্। আমাকে দু-চারদিন ভাবার সময় দাও। এখন আমার ভাববার শক্তি নেই।
রমেনের প্রবেশ
রমেনের প্রবেশ
রমেন।
যাও দাদা, বউদিকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও গে, দেরি কোরো না। কিছুতেই কোনো কথা কইতে দিয়ো না ওঁকে। রাত হয়ে গেছে।
[আদিত্যের প্রস্থান
[আদিত্যের প্রস্থান
সরলা।
শ্রদ্ধানন্দ পার্কে কাল তোমাদের একটা সভা আছে না?
রমেন।
আছে।
সরলা।
তুমি যাবে না?
রমেন।
যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবার আর যাওয়া হল না।
সরলা।
কেন?
রমেন।
সে কথা তোমাকে বলে কী হবে?
সরলা।
তোমাকে ভীতু বলে সবাই নিন্দে করবে।
রমেন।
যারা আমায় পছন্দ করে না তারা নিন্দে করবে বৈকি।
সরলা।
তা হলে শোনো আমার কথা, আমি তোমাকে মুক্তি দেব। সভায় তোমাকে যেতেই হবে।
রমেন।
আর-একটু স্পষ্ট করে বলো।
সরলা।
আমিও যাব সভায় নিশেন হাতে নিয়ে।
রমেন।
বুঝেছি।
সরলা।
পুলিশে বাধা দেয় সেটা মানতে রাজি আছি কিন্তু তুমি বাধা দিলে মানব না।
রমেন।
আচ্ছা, বাধা দেব না।
সরলা।
এই রইল কথা।
রমেন।
রইল।
সরলা।
আমরা দুজন একসঙ্গে যাব কাল বিকেল পাঁচটার সময়।
রমেন।
হাঁ যাব, কিন্তু ঐ দুর্জনরা তার পরে আমাদের আর একসঙ্গে থাকতে দেবে না।
আদিত্যের প্রবেশ
আদিত্যের প্রবেশ
সরলা।
ও কী, এখনি এলে যে বড়ো?
আদিত্য।
দু-একটা কথা বলতে বলতেই নীরজা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, আমি আস্তে আস্তে চলে এলুম।
রমেন।
আমার কাজ আছে-- চললুম।
সরলা।
(হেসে) বাসা ঠিক করে রেখো, ভুলো না।
রমেন।
কোনো ভয় নেই। চেনা জায়গা।
[রমেনের প্রস্থান
[রমেনের প্রস্থান
সরলা।
(আদিত্যের প্রতি) যে-সব কথা বলবার নয় সে আমাকে বোলো না আজ, পায়ে পড়ি।
আদিত্য।
কিছু বলব না, ভয় নেই।
সরলা।
আচ্ছা, তা হলে আমিই কিছু বলতে চাই শোনো, বলো কথা রাখবে।
আদিত্য।
অরক্ষণীয় না হলে কথা নিশ্চয় রাখব তুমি তা জানো।
সরলা।
বুঝতে বাকি নেই আমি কাছে থাকলে একবারেই চলবে না। এই সময়ে দিদির সেবা করতে পারলে খুশি হতুম, কিন্তু সে আমার ভাগ্যে সইবে না। আমাকে অনুপস্থিত থাকতেই হবে। একটু থামো, কথাটা শেষ করতে দাও! শুনেইছ ডাক্তার বলেছেন বেশি দিন ওঁর সময় নেই। এইটুকুর মধ্যে ওঁর মনের কাঁটা তোমাকে উপড়ে দিতেই হবে। এই কয়দিনের মধ্যে আমার ছায়া কিছুতেই পড়তে দিয়ো না ওঁর জীবনে।
আদিত্য।
আমার মন থেকে আপনিই ছায়া যদি পড়ে, তবে কী করতে পারি?
সরলা।
না না, নিজের সম্বন্ধে অমন অশ্রদ্ধার কথা বোলো না। সাধারণ বাঙালি ছেলের মতো ভিজে মাটির তলতলে মন কি তোমার? কক্ষনো না, আমি তোমাকে জানি।
আদিত্যের হাত ধরে
আমার হয়ে এই ব্রতটি তুমি নাও। দিদির জীবনান্তকালের শেষ কটা দিন দাও তোমার দাক্ষিণ্যে পূর্ণ করে। একেবারে ভুলিয়ে দাও যে আমি এসেছিলেম ওঁর সৌভাগ্যের ভরা ঘট ভেঙে দেবার জন্য।
আদিত্য নিরুত্তর
কথা দাও ভাই।
আদিত্য।
দেব কিন্তু তোমাকেও একটা কথা দিতে হবে। বলো রাখবে?
সরলা।
তোমার সঙ্গে আমার তফাত এই যে, আমি যদি তোমাকে কিছু প্রতিজ্ঞা করাই সেটা সাধ্য, কিন্তু তুমি যদি করাও সেটা হয়তো অসম্ভব হবে।
আদিত্য।
না, হবে না।
সরলা।
আচ্ছা, বলো।
আদিত্য।
যে কথা মনে মনে বলি সে কথা তোমার কাছে মুখে বলতে অপরাধ নেই। তুমি যা বলছ তা শুনব এবং সেটা বিনা ত্রুটিতে পালন করা সম্ভব হবে যদিও নিশ্চিত জানি একদিন তুমি পূর্ণ করবে আমার সমস্ত শূন্যতা। কেন চুপ করে রইলে?
সরলা।
জানি নে যে ভাই, প্রতিজ্ঞাপালনে কী বিঘ্ন একদিন ঘটতে পারে।
আদিত্য।
বিঘ্ন তোমার অন্তরে আছে কি? সেই কথাটা বলো আগে।
সরলা।
কেন আমাকে দুঃখ দাও? তুমি কি জান না এমন কথা আছে ভাষায় বললে যার আলো যায় নিভে।
আদিত্য।
আচ্ছা, এই শুনলুম, এই শুনেই চললুম কাজে।
সরলা।
আর ফিরে তাকাবে না?
আদিত্য।
না, কিন্তু ... একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, এখন কী করবে, থাকবে কোথায়?
সরলা।
সে ভার নিয়েছেন রমেনদা।
আদিত্য।
রমেন তোমাকে আশ্রয় দেবে? সে লক্ষ্মীছাড়ার চালচুলো আছে কি?
সরলা।
ভয় নেই তোমার, পাকা আশ্রয়। নিজের সম্পত্তি নয়,কিন্তু বাধা ঘটবে না।
আদিত্য।
আমি জানতে পারব তো?
সরলা।
নিশ্চয় জানতে পারবে কথা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ইতিমধ্যে আমাদের দেখবার জন্যে একটুও ব্যস্ত হতে পারবে না এই সত্য করো।
আদিত্য।
তোমারো মন ব্যস্ত হবে না?
সরলা।
যদি হয় অন্তর্যামী ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না।











